হাবিবুর রহমান
স্বপন :: কুষ্টিয়া শহরের
লালন আখরায় ৫ দিন ব্যাপী উৎসব শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ থেকে। গত ২৫ মার্চ সোমবার
সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন সাংবাদিক গিয়েছিলাম লালন শাহ-এর আস্তানায়। দেখলাম লালন
ভক্তরা গাট্টি বোকচা নিয়ে আসছেন উৎসবে যোগ দিতে। বিশাল
আঙ্গিনায় মজমা বসেছে স্থানে স্থানে। চলছে গঞ্জিকা সেবন এবং লালন ফকিরের গান। বাদ্য
যন্ত্র শুধু মাত্র একতারা এবং ঢোল। কেউ বা আবার তবলাও বাজাচ্ছেন। পশ্চিম দিকে তৈরি
হচ্ছে বিশাল প্যান্ডেল। সেখানে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকদের দল। এক বিশাল দেহধারী
ব্যক্তি মাদক দ্রব্য পান করছিলেন প্যান্ডেলের উত্তর কোনায় একটি চেয়ারে বসে। ২০/২২ জন স্বেচ্ছসেবক ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে
এভাবে
মদ পান করায় ভৎর্সনা করতেই তিনি রুদ্র মূর্তি ধারণ
করলেন। এক যুবকের সার্টের কলার ধরে ঝাঁকুনি দিলেন। আর যায় কোথায়
যুবকেরা এবার তার উপর চড়াও হলো। এক পর্যায়ে লাঠি
পেটা শুরু করলো। মাথায় লাঠির আঘাত লাগলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলো। পুলিশ এলো।
যুবকেরা স্থান ত্যাগ করলো। এসব দেখে মনটা খারাপ হলো। ভাবছি লালন ফকির তো মারামাররি
রক্তারক্তি করেন নি। তিনি তো মানুষের কল্যাণ চিন্তা করেছেন। ভাব তত্ত্বের কথা
সাজাতেন গানের সুরে। আজ সেখানে কি হচ্ছে। তাকে স্মরণ করতে যে সব ভক্তগণ আসছেন তারা
তো গ গোল ফ্যাসাদ বা মারামারি করেন না। মদও পান করেন না। তবে গাঁজায় দম দেন।
যারা লালনের দর্শন
জানেন না বা বোঝেন না। তাদের কাছে সবই ব্যবসা বা ব্যক্তি স্বার্থের ব্যাপার। দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত এখন গবেষণা করছেন
কি করে একজন অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি কালজয়ী গান লিখে গেলেন। স্ব-শিক্ষিত লালন আজ
আমাদের কাছে এক বিষ্ময় এবং কিংবদন্তি।
ছেঁউড়িয়া একটি
ছায়াঘেরা নিবিড় গ্রাম। এখন সেটি কুষ্টিয়া শহরের একটা মহল্লা। একপাশে গড়াই অন্য
পাশে কালিগঙ্গা দু’টি বহমান নদী। আজ থেকে প্রায় দুইশত
পঁচিশ বছর আগের একদিন ভোরবেলা ষোল-সতের বছর বয়সের অচেতন লালন ভাসতে ভাসতে
কালিগঙ্গা নদীর তীরে এসে ভিড়ল। ছেঁউড়িয়া গ্রামের মওলানা মলম কারিকর নামাজি লোক।
সেদিন ভোরবেলা মওলানা মলম ফজরের নামাজ পরে কালিগঙ্গা নদীর দিকে হাওয়া খেতে আসলেন,
হঠাৎই দেখতে পেলেন এক অচেনা সংজ্ঞাহীন যুবক অর্ধজলমগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে, ছেলেটির
মুখে ও শরীরে বসন্ত রোগের দাগ বিদ্যমান। তিনি কাছে গিয়ে দেখলেন ছেলেটি বেঁচে আছে,
খুব ধীরলয়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস। নিঃসন্তান হাফেজ মলমের বুকের ভেতর হু হু করে উঠল,
এ কোনো অচেনা যুবক নয়; খোদা যেন তাঁর সন্তানকেই ভাসিয়ে এনেছেন তাঁর কাছে। মলম
তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরলেন এবং তাঁর অপর তিন ভাইকে সাথে নিয়ে আসলেন। এবার চার ভাইয়ে
ধরাধরি করে অচেনা যুবককে নিজের বাড়িতে আনলেন। মলম ও তার স্ত্রী মতিজান দিনরাত
সেবা-যত্ন করতে লাগলেন। দিনে দিনে অচেনা যুবকটির মুখে জীবনের আলো ফিরে এলো। মতিজান
জিজ্ঞাসা করল বাবা তোমার নাম কী? ফকির লালন।
আমৃত্যু ফকির লালন ছেঁউড়িয়াতেই ছিলেন, মৃত্যুর পর ছেঁউড়িয়ার আঁখড়াবাড়িতেই তার সমাধি নির্মিত হয়। ছেঁউড়িয়া ভিত্তিক
লালনের জীবন বৃত্তান্ত বিস্তারিতভাবে খুঁজে পাওয়া যায় ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টু
শাহের সম্পাদিত ‘লালন সংগীত’ নামক গ্রন্থে। লালন কোথায়
ছিলেন, কিভাবে কালিগঙ্গা দিয়ে ভেসে আসলো এসব বিষয়ে যে তথ্য পাওয়া যায় তা
সর্বজনগ্রাহ্য নয়। কথিত আছে গঙ্গা স্নান সেরে ফেরার পথে লালন বসন্ত রোগে
গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। রোগের প্রকোপে অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গীসাথীরা তাঁকে
মৃত মনে করে রোগ সংক্রমণের ভয়ে তাড়াতাড়ি মুখাগ্নি করে নদীতে ফেলে দেয়।
লালনের জন্ম আসলে
কোথায় তা আজো নিশ্চিত করে বলা যায়না। কোন কোন লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার
কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। এই মতের সাথে
অনেকেউ দ্বিমত পোষণ করেন এই বলে যে, ছেঁউড়িয়া থেকে
মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের ভাড়ারা গ্রামের ষোল-সতের বছরের একটি যুবক নিখোঁজ হলো
অথচ তার দীর্ঘ জীবদ্দশায় তাঁকে তার কোন আত্মীয়-স্বজন কিংবা পরিচিতন জন কেউ চিহ্নিত
করতে পারলোনা-তা এক বিস্ময়কর ব্যপার। ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক
মোহম্মদী পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম যশোর জেলার ফুলবাড়ী গ্রামের মুসলিম
পরিবারে বলে উল্লেখ করা হয়। কারও কারও ধারণা লালন শাহ ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নদী
তীরের কোন এক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে পানজুশাহের ছেলে খোন্দকার
রফিউদ্দিন তাঁর ভাবসংগীত নামক গ্রন্থে ফকির লালনের জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে
গিয়ে বলেন ফকির লালন শাহের জন্মভূমি যশোর জেলার হরিণাকুন্ডু থানার অধীন হরিশপুর
গ্রামেই ছিল, ইহাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। লালনের জন্ম স্থান সম্পর্কে লালন গবেষক ড.
আনোয়ারুল করিমের ধারণাটি ছিলো অনবদ্য, ‘‘আমি দীর্ঘ ১০ বছর লালন ফকিরের জীবনী
সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করে বেড়িয়েছি।
কিন্তু তাঁর
জাতিত্ব পরিচয় রহস্যময়। আসলে লালন নিজও তাঁর জন্ম পরিচয় প্রদান করতে উৎসাহবোধ
করেননি, তা তাঁর গানেই স্পষ্টমান/সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/লালন কয় জাতের
কিরূপ
দেখলাম না এই নজরে/সত্যিই তাই, জাতপাতের উর্দ্ধে উঠে লালন নিজেকে শুধুই
মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে গেছেন/লালন হিন্দু কি মুসলমান এ নিয়েও বিস্তর মতামত পাওয়া
যায়। কারো মতে লালন কায়স্থ পরিবারের সন্তান যার পিতা মাধব এবং মাতা পদ্মাবতী; পরে
লালন ধর্মান্তরিত হন। গবেষকদের মতে বেশির ভাগই মনে করেন লালন মুসলিম তন্তুবায়ী
পরিবারের সন্তান। লালন ফকির নিজের জাত পরিচয় দিয়ে গিয়ে বলেছেন-সব লোকে বলে লালন
ফকির কোন জাতের ছেলে/কারে বা কী বলি আমি/দিশে না মেলে।
রোগ মুক্তির
কিছুদিন পর লালন ফকির বিদায় চাইলেন, বললেন আমি সংসার ত্যাগী মানুষ; এই ভবসংসারে আমার ঠাঁই নাই। কথিত আছে লালন অলৌকিকভাবে হেঁটে কালিগঙ্গা পার
হয়ে যায়। পরে অবশ্য মলম ডিঙি নৌকা নিয়ে পার হয়ে প্রায় দৌড়ে গিয়ে লালনকে ধরে ফেলে
এবং ছেঁউড়িয়া ফিরে যাবার জন্য ব্যথিত হৃদয়ে অনুরোধ করে। লালন কিছুক্ষণ চিন্তা করে
বলে যে, যেতে পারি তবে আমার জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। নিঃসন্তান মলম
তাঁর প্রিয় সন্তানের কথা রাখলেন। কালিগঙ্গা নদীর তীরে শ্যামল বৃক্ষমন্ডিত মলমের
বাগানে তৈরী হলো চৌচালা ঘর আর আঁখড়াবাড়ি। চৌচালা ঘরটি লালন সাধনকক্ষ হিসেবে
ব্যবহার করতেন। কালের নিয়মে ছনের ঘরটি বিলীন হয়ে গেলেও মহান সাধক লালনের পরশমাখা
সাধনকক্ষের কপাটজোড়া এবং জলচৌকি এখনো লালন একাডেমির যাদুঘরে রাখা আছে।
এই আঁখড়াবাড়িটিই
ক্রমে সাধন ভজনের পূন্যধামে পরিণত হয়। ফজরের নামাজের পর মওলানা মলম কোরআন তেলাওয়াত
করতেন, ফকির লালন মনোযোগ দিয়ে তেলাওয়াত শুনতেন. মানে জিজ্ঞাসা করতেন। লালন কোরআনের কিছু কিছু আয়াতের আধ্যাত্বিক ব্যাখ্যা করতেন, ব্যাখ্যা শুনে
মওলানা মলম অভিভূত হয়ে যেতেন। লালনের প্রতি অপরিসীম ভক্তি ও অনুপ্রাণিত হয়ে এক সময়
মলম ও মতিজান লালনের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করে মলম কারিকর থেকে হয়ে যান মলম শাহ
অন্যদিকে মতিজান হয়ে যান মতিজান ফকিরানী। ফকির মলম শাহ ছিলেন সর্বাপেক্ষা
বয়োজ্যেষ্ঠ শিষ্য। মলমের অপর দুই ভাই কলম ও তিলম সস্ত্রীক পর্যায়ক্রমে লালনের
শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
লালনের মুখে
বসন্তের দাগ ছিলো, তাঁর হাত দুটো এতো লম্বা ছিলো যে দাঁড়ালে আঙ্গুলগুলো হাঁটুর
নিচে পড়তো। উঁচু নাক, উন্নত কপাল আর গৌরবর্ণের লালনের ছিলো গভীর দৃষ্টিসম্পন্ন চোখ।
কাঁধ বরাবর চুল,লম্বা দাড়ি, হাতে ছড়ি, পায়ে খড়ম, গায়ে খেলকা, পাগড়ি, আঁচলা,
তহবন-সব মিলিয়ে লালন যেন বকে সিদ্ধপুরুষ, পরিপূর্ণ সাধক। লালন মুখে মুখেই গানের পদ
রচনা করতেন। তাঁর মনে নতুন গান উদয় হলে তিনি শিষ্যদের ডেকে বলতেন, ‘পোনা মাছের ঝাঁক এসেছে’। লালন গেয়ে শোনাতেন, ফকির মানিক ও
মনিরুদ্দিন শাহ সেই বাঁধা গান লিখে নিতেন। লালনের জীবদ্দশাতেই তাঁর গান বহুল
জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। ফকির মানিক শাহ সেই সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ গায়ক ছিলেন। লালনের
শিষ্যদের ধারণা তার গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এতো বিপুল
সংখ্যক গান পাওয়া যায় না। শোনা যায় লালনের কোন কোন শিষ্যের মৃত্যুর পর গানের খাতা
তাদের কবরে পুঁতে দেয়া হয়। এছাড়াও অনেক ভক্ত গানের খাতা নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি।
লালন ঘোড়ায় চড়তেন, মাঝে মাঝে গভীর রাতে চাঁদের আলোতে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতেন,
কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন তা তাঁর শিষ্যরা কেউ বলতে পারতেন না।
লালন একাডেমি প্রতি
বছর ফাগুন মাসের দোল পূর্ণিমার রাতে তিনদিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে
থাকে। লালন চত্বর ছাড়াও আঁখড়ার অভ্যন্তরভাগসহ সর্বত্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে
আসা হাজার হাজার বাউলরা ছোট ছোট দলে সারারাত ধরে গান
করে। এছাড়াও প্রতি বছর ১লা কার্তিকে লালনের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে অনুরুপ উৎসব
অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বিদেশের হাজার হাজার বাউল যোগ দেয় সেই উৎসবে, দোল পূর্ণিমার
জোসনায় বাউলরা আকাশের দিকে হাত তুলে গান ধরে..
এলাহি আল আমিনগো আল্লাহ বাদশা আলমপানা তুমি।
ডুবাইয়ে ভাসাইতে
পারো, ভাসাইয়ে কিনার দাও কারোও
রাখো মারো হাত
তোমার, তাইতো তোমায় ডাকি আমি। ।
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সাথে লালনের দেখা হয়েছিল কি না এ নিয়ে মতভেদ আছে। জমিদারির তাগিদেই
রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়ীতে থাকতেন, পদ্মার পাড়ের নির্জনতায় বসে কাব্য রচনা করতেন। ফকির লালনের সাথে রবীন্দ্রনাথের দেখা হয়
তখন তিনি বয়সে কিশোর। তিনি একবার লালনের মৃত্যুরপর আঁখড়ায় এসেছিলেন, গভীর অথচ সহজ
ভাষায় রচিত লালনের গান তাঁকে মুগ্ধ করেছিলো। রবীন্দ্রনাথ কোথাও যেতে হলে পালকি
ব্যবহার করতেন, লালন ফকির ঘোড়ায় চড়তেন। লালন ফকিরের প্রায় আড়াইশ গান রবীন্দ্রনাথ
প্রকাশ করেন, যা ধারাবাহিকভাবে তৎকালীন সময়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রে
প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের সেজ দা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই বোটে বসা ভ্রমণরত
ফকির লালনের একটি স্কেচ এঁকে ফেলেন যার একটি কপি এখনো লালন একাডেমির মিউজিয়ামে
রক্ষিত আছে।
লালনের গান
রবীন্দ্রনাথকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিলো তা তাঁর কবিতা পাঠ করলেই বোঝা যায়। শুধু
কবিতায় নয়, রবীন্দ্রনাথের বেশভূষাতেও এসেছিলো অনবদ্য এক বাউলপনা। আলখেল্লা পরা
বাবরি চুলের শশ্রুমন্ডিত রবীন্দ্রনাথ যেন বাউল বেশে লিখে চলেছেনথ ‘একলা প্রভাতের রৌদ্রে সেই পদ্মানদীর ধারে, যে নদীর নেই কোন দ্বিধা
পাকা দেউলের পুরাকত ভিত ভেঙে ফেলতে’। একদা শান্তি নিকেতনে ফিরে যাবার পর
প্রসঙ্গক্রমে রবীন্দ্রনাথ কালীমোহন ঘোষকে বলেছিলেন- ‘‘তুমিতো দেখেছো শিলাইদহতে
লালন শাহ ফকিরের শিষ্যদের সহিত ঘন্টার পর ঘন্টার আমার কিরূপ আলাপ জমত। পোষাক
পরিচ্ছদ নাই। দেখলে বোঝবার জো নাই তারা কত মহৎ। কিন্তু কত গভীর বিষয় কত সহজভাবে
তারা বলতে পারতো।’’ এ থেকে বোঝায় তিনি তাঁর উপলদ্ধি কিভাবে শ্রদ্ধা করতেন, লালন ও
তাঁর বাউল সমাজকে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও অনেক জায়গায় বলেছেন- তাঁর অনেক গানেই লালনের
ভাবধারা বিদ্যমান আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হিসেবে শিলাইদহ অবস্থানকালে লালন
ফকিরের কবর সংস্কার কাজে অর্থ প্রদান করেন।
গভীর জ্ঞানের
অধিকারী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গভীরভাবেই উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন ফকির লালন এবং
তাঁর গানকে। তাইতো অঁজো পাড়াগাঁর সমাজ বঞ্চিত ফকির
লালন এবং তাঁর গরীব শিষ্যরা উঠে এসেছে তাঁর গানে, কবিতায়-উপন্যাসে।
ফকির লালনের জন্ম
সাল জানা যায়নি, তিনি ১লা কার্তিক ১২৯৭ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৭ অক্টোবর ১৮৯০
খ্রিস্টাব্দে মারা যান এবং তিনি বেঁচে ছিলেন ১১৬ বছর। সেই হিসেবে তিনি জন্মে ছিলেন
১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে। ছেঁউড়িয়াতে ফকির লালনের সাথে তাঁর
পালিত মা মতিজান ফকিরানী, পালিত বাবা মলম শাহ, ফকির মন্ডিত মানিক শাহ, শীতল শাহ,
ভোলাই শাহ, বিশখা ফকিরানী এবং ফকির মনিরুদ্দিন শাহসহ অন্যান্য আরো অনেক ভাবশিষ্যের
সমাধি আছে। প্রতি বছর ১লা কার্তিক এখানে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার বাউল সমবেত হয়ে উদযাপন করে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।