মোঃ
কয়েছ মিয়া :: বাংলাদেশ
আসাম তথা বৃহত্তর বঙ্গ ইসলামের আলোকে আলোকিত করার ক্ষেত্রে যাঁর নাম সবচেয়ে
উজ্জ্বল এবং এদেশের সূফি, দরবেশ, আউলিয়াগণের মাঝে যাঁর প্রভাব ও মর্যাদা
সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা
যায় তিনি সুলতানে বাংলা,হযরত
মাওলানা শাহ্জালাল মুজার্রদ ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। এতদঞ্চল
ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণীনির্বিশেষে জন সাধারণের
মাঝে তাঁর
প্রতি ভালবাসা ও নামের মাহাত্ম ব্যাপক ও অতুলনীয়। নামঃ হযরত
শাহ্জালাল মুজার্রদ ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর পূর্ণ নাম
জালালুদ্দীন জালালুল্লাহ্। আপামর জনসাধারণের মাঝে প্রচলিত
নাম হযরত শাহ্জালাল(রাঃ)।
লকব/উপাধিঃ সংক্ষেপে
আমরা বলতে চাই যেঃ
(ক) একজন ব্যক্তি অনেক সময় সমাজে তার জন্ম স্থানের নামে পরিচিত হন। যা
তাঁর মুল নামের শেষে সংযুক্ত থাকে। যেমন- হযরত জুনাইদ বাগদাদী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(খ) অনেক সময় একজন ব্যক্তি তার অর্জিত বিশেষ
জ্ঞান, প্রজ্ঞা, গুন
বা দক্ষতার কারনে ও সমাজে পরিচিতি লাভ করেন। যেমন- হযরত
আবদুল হক মুহাদ্দিস
দেহলবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
দেহলবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
(গ) একজন ব্যক্তি তার জন্ম স্থানের নামে
পরিচিত না হয়ে বরং জীবনের দীর্ঘ সময় কিংবা মৃত্যুকাল পর্যন্ত যে স্থানে বাস
করেছেন সে স্থানের নামেও পরিচিত হন। যেমন- হাজী এমদাদুল্লা মুহাজিরে
মক্কি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ঐতিহাসিক ও জীবনীকারগণের তথ্যগত বিচ্যুতি
ও মতভেদের কারনে হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ও শায়খ জালালুদ্দীন তাবরিজী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এর জীবনেতিহাস নিয়ে দ্বন্ধ সৃষ্টি হলেও উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে আমরা বলতে
পারি যে হযরত শাহ্ জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি-ই ইবনে বতুতা বর্ণিত জালালুদ্দীন
তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যা সমসাময়িক এবং
পরবর্তি নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বহুমুখি গুণাবলি ও আধ্যাত্মিক
ক্ষমতার কারনে বাংলার মুসলিম সমাজে বহু লকব বা গুণবাচক উপাধি দ্বারা বিভূষিত। বিভিন্ন শিলালিপি, ঐতিহাসিক ও মনীষীগণের
বর্ণনা ও গবেষকগণের রচনাবলীতে সাধারণত নিম্নলিখিত লকবগুলি পাওয়া যায়ঃ শেখ,শায়খুল মাশায়েখ, কুতুব, মুজার্রদ, মখদুম, সুলতানুল বাংলা, আরিফান বুয়দ, কুতুব বুয়দ, মাওলানা, জালালুদ্দীন, তাবরিজী, ইয়েমেনী, কুন্যাভী,তাইজী, সিরাজী, প্রাচ্য-সূর্য, ইত্যাদি। তাঁর কুনিয়াত হল কোরাইশী।
পিতার
নামঃ হযরত
শাহ্জালাল ইয়েমনী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর পিতার নাম হযরত শেখ মুহাম্মদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি
একজন কোরাইশ বংশীয় স্বনামধন্য খ্যাতিমান দরবেশ ছিলেন। তিনি
প্রখ্যাত দরবেশ হযরত আবু সাঈদ তাবরিজীর মুরীদ ও খলিফা ছিলেন। হযরত
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এর মত বুজুর্গ ব্যক্তি হযরত আবু সাঈদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর ফয়েজ হাসিল করেন। সুতরাং হযরত আবু সাঈদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর খিলাফত পাওয়া যে কোন লোকের জন্য সহজ বিষয় ছিল না। সম্ভবত
এ কারণেই শেখ মুহাম্মদ কোরাইশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্মগতভাবে ইয়েমেনী
হলেও সূফী ধারা মোতাবেক নামের শেষে পীরের তাবরিজী উপাধি ধারণ করায় নাম হয়েছে শেখ
মুহাম্মদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি যা বিভিন্ন শিলালিপি ও ঐতিহাসিক বর্ণনায় পাওয়া যায়। শায়খ
শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর বিদুষী মাতা ছিলেন সাইয়্যেদ বংশীয়। হযরত
শেখ মুহাম্মদ কোরাইশী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর পিতার নাম ছিল হযরত শেখ ইব্রাহিম কোরাইশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
জন্ম
তারিখ ও স্থানঃ ইবনে
বতুতার বর্ণনা অনুসারে গবেষকগণের মতে হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ৭৪৬ হিজরী সনে ১৯শে জিলক্বদ ওফাত (ইন্তেকাল) বরণ করেন। সে
মতে তাঁর ১৫০ বছর জীবনকাল ধরে জন্ম সাল হয় (৭৪৬-১৫০)= ৫৯৬ হিজরী। তাঁর
জন্মস্থান হল ইয়েমেনের তাইজ নগরীর কুন্যা নামক স্থানে। এখানে
একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, কোন কোন
লেখক হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং শায়খ জালালুদ্দীন
তাবরিজী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি কে আলাদা দু জন দরবেশ বর্ণনা করে জালালুদ্দীন তাবরিজীর জন্ম ও ইন্তেকালের
তারিখ এবং পান্ডুয়াতে তার মাজার বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু
যে সমস্ত গ্রন্থের সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে মূল গ্রন্থে তা বর্ণিত হয়নি। সে
গুলো পরবর্তিতে অপ্রমাণিত হয়েছে এবং পান্ডুয়াতে তার মাযার নেই বলে সেখানকার
খাদেমগণই বর্ণনা করেন। সেখানে তার জওয়াব সমাধি বা
স্মৃতি সৌধ বিদ্যমান।
শিক্ষাঃ হযরত
শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর পিতা-মাতা শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর
লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার ভার গ্রহণ করেন তাঁর বুযুর্গ মামা সৈয়দ আহ্মদ কবির
সোহ্রাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি সোহ্রাওয়ার্দীয়া
ত্বরিকার একজন প্রখ্যাত সুফি দরবেশ এবং মক্কার বিশিষ্ট আলেম ছিলেম। হযরত
শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে
পর্যটক ইবনে বতুতার বর্ণনায় হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে তাঁর মুরীদ কর্তৃক
মাওলানা সম্বোধন থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তিনি বিদ্যা শিক্ষায় শিক্ষিত একজন
আলেম ছিলেন। এছাড়াও হযরত শায়খ্ আবু সাঈদ তাবরিজী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
বাহাউদ্দিন সোহ্রাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ৭ম শতাব্দীর মুজাদ্দীদ
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর মত জগত খ্যাত
তরিকতের ইমাম ও বুযুর্গ দরবেশ সাধকগণের শিষ্যত্ব ও সান্নিধ্যওহযরত কুতুব উদ্দীন
বখ্তিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
ফরিদ উদ্দীন শকরগঞ্জ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত
নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হাদীস
বিশারদ হযরত বাহাউদ্দীন যাকরিয়া মুলতানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শেখ ফরিদ উদ্দীন আত্তার রহমাতুল্লাহি
আলাইহি, হযরত বোরহানুদ্দীন সাগরজী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর মত যুগের দিকপাল মহান মনীষীগণের সাথে গভীর বন্ধুত্ব থাকাটাও প্রমাণ করে
যে, হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি আধ্যাত্মি অতিন্দ্রীয় জ্ঞান তো বটেই ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য জ্ঞান রাজ্যের
বিভিন্ন শাখায় ও বুতপত্তি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
হযরতের
পীরগনঃ হযরত
শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি শৈশব থেকে প্রায় ২২/২৩/৩০ বছর পর্যন্ত মামা হযরত সৈয়দ আহ্মদ কবির সোহ্রাওয়ার্দী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর নিবিড় তত্ত্বাবধানে শরীয়ত ও মারফতের দীক্ষা গ্রহন ও
আধ্যাত্নিক সাধনা করেন। এরপর তিনি আবু সাঈদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর নিকট মুরীদ হন এবং তাঁর সোহ্বতে প্রায় দুই বছর কাটান। এরপর
হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি সোহ্রাওয়ার্দী ত্বরিকার ইমাম হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর নিকট মুরীদ হন। এ সূত্রে হযরত শেখ সাদী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি হন তাঁর পীর ভাই বাসতীর্থ। শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
প্রায় ৭ বৎসর শিহাবুদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর সান্নিধ্যে কাটান। তাঁর
ইন্তেকালের পর হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত শিহাবুদ্দীন
সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর সুযোগ্য পুত্র শায়খ হযরত বাহাউদ্দিন সোহ্রাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর নিকট মুরীদ হন এবং দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর তাঁর খেদমতে ছিলেন।
সিলেটের
পথে বাংলায় আগমনঃ বিভিন্ন
জীবনীকারগণের বৃত্তান্ত থেকে জানা যায় যে, হযরত
শাহ্জালাল বাংলাদেশের সিলেটের আগমনের পূর্বে একটি স্বপ্ন দেখেন। সেই
স্বপ্নের বৃত্তান্ত পীর মুর্শিদ ও মামা সৈয়দ আহ্মদ কবীর সোহ্রাওয়ার্দী এবং
সংগীয় পীর বাহাউদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দীর নিকট বর্ণনা করেন। স্বপ্নের
বৃত্তান্ত শুনে অবিলম্বে হিন্দুস্তান যাত্রার আদেশ দেন। স্বপ্নের
ইঙ্গিত মতে মুর্শিদ একমুষ্ঠি মাটি তাঁর হাতে দিয়ে বলেন, এই মাটির বর্ণ,গন্ধ
ও স্বাদ যেখানে পাইবে সেখানেই তুমি অবস্থান ঠিক করিবে। তিনি
আরও বললেন, এই মৃত্তিকা মুষ্ঠি যে স্থানে পরিত্যাগ করিবে
সে স্থানের মহত্ত্বের আর তুলনা থাকিবে না। পীরের
নির্দেশের পর হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাংলাদেশে আসার আগে
জন্মভূমি ইয়েমেন গমন করেন। সেখানে পূর্বপুরুষ ও মাতা-পিতার
মাযার যিয়ারত করেন এবং উলুহিয়াতের তত্ত্ব প্রচার করেন। তাঁর
ব্যক্তিত্ব ও গুণে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে লোক তাঁর দিকে ধাবিত হয়। এতে
ইয়েমেনরাজ ঈর্ষান্বিত হয়ে হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে বিষ মিশ্রিত শরবত
দ্বারা কামালত পরীক্ষা করতে চাইলেন। হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি বিষ মিশ্রিত শরবত বিস্মিল্লাহ বলে পান করলে সে বিষের প্রতিক্রিয়ায় উল্টো
ইয়েমেন রাজই মৃত্যুবরণ করে। ইয়েমেনের পরবর্তী রাজা শাহ্জাদা
আলী পিতার মৃত্যু এবং শাহ জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর অলৌকিক ঘটনা দেখে
তাঁর ভক্তে পরিণত হন এবং শাসকের তখ্তে (সিংহাসনে) না বসে শায়খ শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর সাথী হতে চাইলেন কিন্তু হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে রাজ্য পরিচালনার
ভার দিয়ে ইয়েমেন হতে যাত্রা করেন। ইয়েমেন হতে হযরত শাহ্জালাল
বাগদাদ আসেন। বাগদাদে হযরত বাহাউদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দীর
নিকট হতে পুনরায় বিদায় গ্রহন করেন। সেখানে থেকে বিশ্বের প্রধান
প্রধান জনপদে কিছুদিন করে অবস্থান করে সমরকন্দ, আফগানিস্তান
হয়ে মুলতান উপস্থিত হন। মুলতান হতে হযরত শাহ্জালাল
দিল্লীতে এসে উপস্থিত হন। ইয়েমেনের শাহ্জাদা আলী
সিংহাসন ছেড়ে এ সময়ে তাঁর সাথে মিলিত হন। দিল্লীতে
হযরত নিজামুদ্দীন আউলীয়ার সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। এ
প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, হযরত শাহ্জালাল
রহমাতুল্লাহি আলাইহি দিল্লীতে অবস্থানকালে হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এঁর একজন শিষ্য জানালেন যে,আরব দেশ
থেকে এক দরবেশ এসেছেন তিনি নারী মুখ দর্শণ করেন না। চাদর
দিয়ে মুখ ঢেকে চলেন পথ চলেন এবং সব সময একজন কম বয়সী সুদর্শন বালক কে সঙ্গে
রাখেন। হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া উতসুক হয়ে একজন
শিষ্যকে পাঠালেন দরবেশকে নিয়ে আসার জন্য। হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি অবস্থা বুঝতে পেরে প্রেরিত শিষ্যের হাতে একটি কৌটার মধ্যে তুলা দিয়ে তার
উপরে একটি জ্বলন্ত অঙ্গার দিয়ে কৌটার মুখ বন্ধ করে ফেরত পাঠান।
হযরত
খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া কৌটার মুখ খুলে দেখলেন যে, তুলার
উপর একটি জ্বলন্ত অঙ্গার কিন্তু এতে তুলার একটি আশও জ্বলছে না। হযরত
নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি
আলাইহি এ ঘটনা থেকে আগত দরবেশের কামালিয়াত ও ফজিলত বুঝতে পারলেন এবং নিজেই হযরত
শাহ্জালাল ইয়েমেনীর সাথে সাক্ষাত করেন এবং শ্রদ্ধা ও প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ
একজোড়া কবুতর উপহার দেন। সে সময় থেকে আজও এ কবুতর
জালালী কবুতর নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। দিল্লী থেকে
হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি মুর্শীদ প্রদত্ত মাটি সহকারে বাংলাদেশে আগমণ করেন। খুলনা, রংপুর, সোনারগাঁ
সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন। এখানে
প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় উলেৱখ করা প্রয়োজন। তা হল, হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি যখন ত্রিপুরা রাজ্যের বর্তমান কুমিল্লা সফর করছিলেন তখন কুমিল্লার মাটির
সাথে মুর্শীদ প্রদত্ত মাটির মিল পেয়ে তিনি বলেছিলেন কুহু মিলা। কিংবদন্তি
অনুসারে কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে সেখান থেকে কুমিল্লা শব্দটির উতপত্তি। কুমিল্লার
যে স্থানটিতে একটি টিলার উপরে হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিছু দিন অবস্থান করে
ধ্যানমগ্ন হয়ে স্রষ্টার ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন ছিলেন, সেখানে তাঁর কর্তনকৃত চুল ও নখ প্রোথিত আছে। এখানে
নয়নাভিরাম টিলার উপরে ঐ আস্তানাটি রয়েছে। আস্তানাকে
কেন্দ্র করে একটি জওয়াব সমাধী,মসজিদ ও
মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। বর্ণিত রয়েছে যে, এই আস্তানাটির নিকটবর্তী শাহ্পুর গ্রামে
ভারতের ভাগলপুর হতে আগত প্রায় ২৫০ বছর পূর্বের প্রসিদ্ধ আউলিয়া হযরত শাহ্
নুরুর্দ্দীন আলক্বাদেরী প্রকাশ্যে হযরত বন্দী শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রতি বৃহস্পতিবার হযরত
শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি মাজার শরীফ সিলেট থেকে চট্টগ্রাম হযরত শাহ্ আমানত রহমাতুল্লাহি
আলাইহি দরগায় পদব্রজে সফর করতেন।
সিলেট
বিজয়ঃ সুলতান
শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের আমলে ৭০৩ হিজরীতে শাহ্জালাল ইয়েমেনী আধ্যাত্মিক শক্তির
সাহায্যে সিলেট বিজয় করেন। বর্ণিত আছে যে, গৌড় গোবিন্দ কর্তৃক শেখ বুরহানুদ্দীনের শিশু
পুত্র হত্যার প্রতিবিধানার্থে প্রেরিত সিকান্দার গাজীর বাহিনী গৌড় গোবিন্দের
ঐন্ত্রজালিক ক্ষমতার কারণে বারবার পরাভুত হয়। অবশেষে
হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ও তাঁর অনুসারী ৩৬০ আউলিয়া সহযোগে গৌড় গোবিন্দের ঐন্ত্রজালিক ক্ষমতাকে
পরাভূত করে সিলেট বিজয় করা হয়।
রিয়াযত
ও সাধনাঃ হযরত শাহ্জালাল (রঃ) ছিলেন ইবাদত ও রিয়াযত- সাধনার এক বিস্ময়কর প্রতিক। তিনি সায়েমুদ্দহর ও কায়েমুললাইল ছিলেন অর্থাৎ নিষিদ্ধ দিন ব্যতীত সারা বছর দিনে রোজা রাখতেন এবং রাতে ইবাদতের হক আদায়
করতেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি কোন রাত্র কিয়ামের জন্য, কোন রাত রুকু, কোন রাত সিজদার জন্য নির্দিষ্ট করে নিতেন । নিম্নে তাঁর ইবাদত
ও রিয়াযত-সাধনার কয়েকটি
ঐতিহাসিক বর্ণনা তুলে ধরা হলঃ ইবনে বতুতা
বর্ণনা করেন,তিনি (শায়খ জালাল) ৪০ বৎসর হতে বরাবর রোযা রাখতেছিলেন। দশ দিন অন্তর তিনি
ইফতার করতেন । তাঁর শরীর ছিল কৃশকায়-পাতলা, আকৃতি ছিল লম্বা গন্ডদ্বয় ছিল ক্ষীণ। ইবনে বতুতা আরো বলেন ,সে দেশের হিন্দু মুসলমান সকলে শায়খের দর্শনের জন্য আসত এবং
তাঁকে ভেট(নযরানা) প্রদান করত। তা ফকির ও কাঙাল সকলেই
খেত কিন্তু শায়খ কেবল
একটি গরুর দুধ পান করতেন।
ডঃ জে,ওয়াইজ Notes on
Shahjalal the patron saint of Sylhet গ্রন্থে উলেৱখ করেন
সুহেল-ই- ইয়ামন গ্রন্থে বর্নিত আছে, for thirty years Shah Jalal is said to have lived in a
cave without Crossing the threshold.”
ইসরারুল
আউলীয়ায় বর্ণিত আছে যে,
শায়খ ফরিদউদ্দিন শকরগঞ্জ (রাঃ) বলেন,শায়খ জালালুদ্দীন তাবরিযী(রাঃ) অধিকাংশ সময় অনাহারে থাকা সত্বেও
কাহার নিকট হইতে কিছু গ্রহণ করিতেন না। একবার তিন দিন পর্যন্ত
তাঁহার নিকট কিছুই
ছিল না । তিনি ও তাঁহার সাথীগণ
তরমুজ দ্বারা ইফতার করিতেন । তথাকার (বদায়ুন) শাসনকর্তা এই সংবাদ পাইলেন এবং এ কথাও জানিতে
পারিলেন যে তিনি কাহারও
দান-দক্ষিণা গ্রহন করেন না । তাই একজন লোক দ্বারা
কিছু আশরফি শায়খের
খাদিমের নিকট এ বলে পাঠালেন, যেভাবে ইচ্ছা খরচ কর কিন্তু শায়খ যেন জানিতে না পারেন কোথা হইতে এই খরচ হইতেছে। খাদিম ইহা গোপন রাখা
পছন্দ করিলেন না। তিনি শায়খের কাছে সকল কথা খুলিয়া বলিলেন। শায়খ জিজ্ঞাসা করিলেন
- সেই লোক কিভাবে আসিয়াছিল এবং কোথায় কোথায় পা পড়িয়াছিল? খাদিম সব দেখাইয়া দিলেন, শায়খ বলিলেন- সেই
ব্যাক্তি যেখানে যেখানে পা ফেলিয়া আসিয়াছে তথাকার মাটি খুঁড়িয়া এবং আশরাফি গুলি বাহিরে ফেলিয়া দাও। হযরত শায়খ জালাল
(রাঃ) শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্যত্বে ছিলেন সাত বছর। বর্ণিত আছে শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রাঃ) প্রতি বছর বাগদাদ হইতে পদব্রজে হজ্বে গমন
করিতেন। বার্ধক্যের জন্য তিনি ঠান্ডা খাবার হজম করিতে পারিতেন
না। গরম খাদ্য পরিবেশনের জন্য শায়খ জালাল (রাঃ) মাথায় একটি জ্বলন্ত চুলা বহন করতেন। বাগদাদ থেকে মক্কা
পর্যন্ত গরম খাদ্য সরবরাহের
ব্যবস্থা করতেন। এ প্রসঙ্গে ইসরারুল আউলিয়া গ্রন্থে শায়খ ফরিদউদ্দীন শকরগঞ্জ (রঃ) বর্ণনা করেন, শেখ জালালুদ্দীন তাবরিযি তাহাঁর পীর বাহাউদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর এতটাই সেবা করতেন যে অন্য কোন মুরীদ
এতটা করতেন না।
একদা তিনি জ্বলন্ত চুলা মাথায় করিয়া যাইতেছিলেন। আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, কোথায় যাইতেছেন? তিনি উত্তর করিলেন , হজ্বে । তাহার খিদমতের পদ্বতি দেখিয়া আমি বিস্মিত হইয়া গেলাম। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করিলাম - কতদিন যাবৎ তিনি এইভাবে পীরের খেদমত করিতেছেন? তাহারা বলিলেন, পঁচিশ বৎসর যাবত আমরা
এমনই দেখিতেছি। হযরতের
বুযুর্গীঃ হযরত শায়খ শাহ্ জালাল ইয়েমেনী (রঃ) এঁর বুযুর্গী ও কামালত সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালাই উত্তম অবগত। আমরা কয়েকটি ঘটনা
ও মনীষীর উক্তি তুলে ধরছি। হযরত শায়খ জালালুদ্দীন যখন তাঁর মামা সৈয়দ আহমদ কবির (রাঃ)
এঁর তত্তাবধানে ছিলেন তখন মামার মনোভাব অনুসারে একটি বাঘের যথাযথ
উপযুক্ত বিচার সম্পন্ন করার পর সৈয়দ আহমদ কবির (রঃ) বললেন জালাল সুমা
বকামাল রছিদি। অর্থাৎ জালাল তুমি আত্ম উন্নতির চরম শিখরে পৌছিয়াছ। ফাওয়ায়েদুল ফওয়াদ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে , একবার শায়খ শিহবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী মক্কা শরীফ হতে আসার পথে ভক্তগন তাঁকে অনেক নজর- নেয়াজ প্রদান করলেন। এক গরিব বৃদ্ধাও হযরতকে একটি দিরহাম প্রদান করলেন। তিনি তাঁর সাথী দরবেশগণ কে প্রাপ্ত দ্রব্য সামগ্রী থেকে নিতে আদেশ দিলেন এবং
সকলেই নিজের ইচ্ছামত সামগ্রী উঠিয়ে নিলেন। হযরত শায়খ জালাল কিছুই
নিলেন না। শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রাঃ) কিছু নিতে বললে শায়খ জালাল গরিব বৃদ্ধার দেওয়া দিরহামটি উঠিয়ে নিলেন। তা দেখে শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রঃ) বললেন , জালালুদ্দীন!
বাহ্যত
যদিও তুমি একটি দিরহাম গ্রহণ করলে যাহা সকলের চোখেই নগন্য কিন্তু প্রকৃতপক্ষে
তুমি এমন জিনিস গ্রহণ করলে যা ওই সকল মূল্যবান দ্রব্যাদির আত্মা স্বরূপ তুমি অন্যান্যদের জন্য কিছুই রাখিলেনা চতুর্দশ শতকের বিশখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা
তাঁর ভ্রমন বৃত্তান্তে হযরত শাহ্জালাল (রঃ) কে কেন্দ্র করে লিখেন, অলিয়্য মিনাল আউলিয়া বা আউলিয়াদের ওলি, মিনাল কুবারুল আউলিয়া বা শ্রেষ্ঠ আউলিয়াগনের অন্যতম, মাসিরাল আযিমা বা মহান নির্দেশনাবলির স্থাপয়িতা ও আফরাদুর রিজাল
বা মানুষের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনে বতুতার বর্ণনায়
আরো জানা যায় যে ,
চীনের বিখ্যাত সূফী সাধক শায়খ বুরহানউদ্দীন
সাগরজী (রাঃ) প্রসঙ্গক্রমে বলেন , আমার ভাই শায়খ জালালুদ্দীন
এঁর পদবী ইহা অপেৰা অনেক
উর্ধ্বে। সংসারের সমস্ত ব্যাপারে
তাঁর অধিকার আছে। তিনি আরো বলেন, আমি জানি তিনি প্রত্যেক দিন ফজরের নামায মক্কা শরীফে পড়তেন এবং প্রত্যেক বছর হজ্ব পালন করতেন। তিনি আরাফা এবং ঈদের
দিনে অদৃশ্য হয়ে
যেতেন কারো কোন খবর হতো না। এছাড়াও ওই সময়ের
বিভিন্ন শিলালিপিতে খোদিত
আছে , জালালুদ্দীন জালালুলৱাহ
আরিফান বুয়দ। অর্থাৎ জালালুদ্দীন আল্লাহর দ্বীপ্তি এবং আরেফগণের গৌরব। জালালুদ্দীন কুতুব বুয়দ অর্থাৎ জালালুদ্দীন কুতুবগনের সুঘ্রাণ। সাকিন আউজ জান্নাত
ওয়ালা অর্থাৎ বেহেস্তে তাঁর স্থান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমাজ জীবনে হযরতের প্রভাবঃ হযরত শাহ্জালাল (রাঃ) প্রেমময় দ্বীনের
যে প্রদীপ শিখা আল্লাহ্র হুকুমে এ বংগ অঞ্চলে জ্বালিয়েছেন তাঁর আলোয়
কত যে অসংখ্য অন্ধকার হৃদয় আলোকিত হয়েছতা আল্লাহ্ তায়ালাই ভাল জানেন। বস্তুত তিনি নিজেই আলোক শিখা। তাঁর আলোয় আলোকিত পুরো বংগ অঞ্চল। এ দেশের জনগণের ধর্মীয়,
সামাজিক ,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনে, লোক সাহিত্যে, ধ্র্বপদী সাহিত্যে, শিক্ষা,সংস্কৃতি,
ঐতিহ্য, সব ক্ষেত্রেই হযরত
শাহ্জালাল ইয়েমেনী (রাঃ) এঁর প্রভাব পাওয়া যায়। চিশতিয়া ত্বরিকার
বুযুর্গগনের মালফুযাত, বিভিন্ন ঐতিহাসিকের উক্তি বাংলার শাসকদের বিভিন্ন স্থাপনা ও শিলালিপি, তাঁর নামে স্থানের নামকরন ও মুদ্রা প্রচলনই তা প্রমান করে। বাংলার ইতিহাসে এমন
কোন শাসকের দরবার নেই যা
হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী (রাঃ) এঁর দরবারের
অনুগ্রহে অনুগৃহীত হতে চায়নি।
এ
প্রসঙ্গে ইংরেজ কালেক্টর লিন্ডসের আত্মজীবনি
থেকে সামান্য উল্লেখ করা হলো - সিলেট পৌছার পর আমলারা আমাকে জানালেন যে, সিলেটের শাসনকর্তার প্রথম কর্তব্য হযরত শাহ্জালালের দরগায় যেয়ে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন
করা। ভারতবর্ষের দুর-দুরান্ত হতে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা এই দরগায়
জিয়ারত করতে আসেন। আমি প্রচলিত
প্রথা
মোতাবেক জুতা বাহিরে রেখে দরগায় যেয়ে পাঁচটি মোহর নজরানা দিলাম। এরূপে অভিসিক্ত হয়ে আমি প্রজাদের আনুগত্য গ্রহণ করলাম। বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেখা গেছে যারা সিলেট -১ সংসদীয় আসনে (দরগা মহল্লায়
) বিজয়ী হয় তারাই সরকার গঠন করে
এবং বর্তমান পর্যন্ত এটা বাস্তব বলে প্রমানিত হয়েছে।
এদেশের রাজনৈতিক শাসক যারাই হোকনা কেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
আপামর জনগনের হৃদয়ের মনিকোঠায় শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে সমাসীন হযরত
শাহ্জালাল (রাঃ)
এতদঞ্চলের মুকুটহীন সম্রাট । আর এ কারণেই সিলেটকে
বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক
রাজধানী ও পূণ্যভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ইন্তেকালঃ ৭৪৬ হিজরি
সনের ১৯শে জিলক্বদ হযরত শাহ্জালাল (রাঃ) ১৫০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনের পরিসমাপ্তিঘটে। ইবনে বতুতা বর্ণনাকরেন
, বুরহানউদ্দীন সাগরজী আমাকে বলেন ,হযরত শাহ্জালাল (রাঃ) ওফাতের একদিন পূর্বে তাঁর মুরিদগণকে
ডেকে
এ উপদেশ দিলেন যে , তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে, আল্লাহ্কে ভয় করবে। আল্লাহর হুকুমে কাল
আমি তোমাদের নিকট হতে বিদায় নিব। পরের দিন যোহরের নামাজের শেষ সিজদার অবস্থায় তিনি
ইহলোক ত্যাগ করেন। আল্লাহপাক তাঁর বন্ধুকে তাঁর কাছে টানিয়া নিলেন। হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী
(রাঃ) এঁর হুজরার
পাশে অলৌকিক ভাবে একটি কবর খোদিত অবস্থায়
পাওয়া যায়। উক্ত কবরে কাফন ও খুশবো-আতর মওজুদ ছিল। তাঁহার মুরিদগণ হযরতকে
কাফন পড়াইয়া জানাজার
নামাজ পড়িয়া দাফন করিলেন। আল্লাহ তাঁহার পূত-পবিত্র
আত্মার শান্তি বিধান করুন। উল্লেখ্য হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী (রাঃ) এঁর হুজরার পাশে মুর্শীদ
প্রদত্ত মক্কার মাটি
তাঁর নির্দেশে যেখানে প্রোথিত করা হয়েছিল
সেখানেই কবরটি খোদিত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রতি বছর হিজরী সনের
১৯ ও ২০শে জিলক্বদ ওরস শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। ভেদাভেদ ভুলেগিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লোকজন সুলতানুল বাংলা, প্রাচ্যের সূর্য হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী (রাঃ) এঁর ওরস শরীফে
হাজির হয়ে অপার্থিব প্রশান্তি লাভ করে।
সুলতানুল বাংলা হযরত শাহজালাল মুজার্রদ ইয়েমেনী
(র.) এঁর দরগাহ শরীফের
যাবতীয় সকল কাজ কারবার আঞ্জাম একমাত্র মোতওয়াল্লী
মহোদয়ের হুকুমে পরিচালিত হয়। তিনিই একমাত্র যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষ যাঁর আদেশে তার নির্বাচিত
বিশ্বস্ত ও সাধু প্রকৃতির লোকজন দরবারের ধর্মীয় কাজকর্ম করে থাকেন। সরেকওম মোতওয়াল্লী জনাব ইউসুফ আমানুল্লাহ বর্তমানে এই পদে বহাল আছেন যাঁর পিতা এ. জেড.আবদুল্লাহ (র.) সিলেট তথা দেশের একজন বিখ্যাত ও ঐতিহাসিকভাবে সুপরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। ৭৪৬ হিজরীর ১৯ শে জিলক্বদ
রাসুলে পাক সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের আস্থাভাজন প্রতিনিধি, একজন মহাসাধকের ইন্তেকাল, একজন পূত ব্যক্তিত্বের পারলৌকিক জীবনে স্থানান্তর সংঘটিতহয়।
এ রূপে
আমরা মানব মনের ঘৃণ্য দোষ
সমূহের মূলোৎপাটন কারী এবং আমাদের বিশ্বাস, দয়া ও সাম্যের অগ্রদূতকে হারালাম।
সুলতানুল বাংলা হযরত মাওলানা শাহ্ জালালুদ্দীন মুজার্রদ ইয়েমেনী (রাঃ)
আমাদের কাছ থেকে লোকান্তরিত হয়েছেন কিন্তু অক্ষির অগোচর তাঁর জ্যোতির্ময়
অস্তিত্ব আমাদের মাঝে বিদ্যমান। আমরা তাঁর কাছ থেকে
আল্লাহ ও তদীয় রাসুল (সাঃ) এঁর প্রতি প্রেমাসক্তির তৃষ্ণা নিবারণের জন্য শুদ্ধতার সঞ্জীবনী লাভ করি। আমাদের জ্যোতি সত্তার স্থায়িত্বের জন্য তাঁর কাছ থেকে আমাদের হৃদয়ে অপার্থিব
নির্মলতার আকর্ষণ
লাভ করি। আমরা তাঁর চতুর্মুখী
ঐশী গুনাবলীর মহিরুহের পুষ্প থেকে সুঘ্রান লাভ করি। আমরা তাঁর কাছ থেকে রাসুল (সাঃ) এঁর প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য
ও শিষ্টাচারের রীতি-নীতি তথা আদবের উদাত্ত আহবান শুনতে পাই। আমরা অত্যাচার , বৈষম্য ও ভীতি পরিহারের শিক্ষা লাভ করি। আল্লাহ তায়ালার কাছে
আমাদের প্রার্থনা তিনি
আমাদের প্রিয় শাহ্জালাল বাবার সুনাম ও খ্যাতি
প্রতিটি ক্ষেত্রে চতুর্দিকে উৎকর্ষে ছড়িয়ে দিন এবং তাঁর সীমাহীন দয়ার আচ্ছাদনে
শাহ্জালাল বাবাকে রাখুন । আমাদের শাহজালাল কে আমরা হৃদয়ের গভীরতম তন্ত্রীতে
লালন করি এবং আমাদের
স্মরণালেখ্য হতে ধর্মীয় ও স্বর্গীয় কর্ম
উদ্দীপনা লাভ করি । আল্লাহপাক আমাদেরকেও তাঁর দয়ার আচ্ছাদনে রাখুন এবং হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী (রাঃ)
এঁর কর্মগাঁথার পূণ্য হতে আমাদের যেন
বঞ্চিত না করেন। আমিন!
তথ্যসুত্রঃ hazratshahjalalyemeni.com সহায়ক গ্রন্থ
১। হযরত শাহ্জালাল (র.)
দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী
ইফাবা প্রকাশনা : ১৩৫০/২
ইফাবা গ্রন্থাগার :৯২২.৯৭
ISBN:984-06-0309-4
২। হযরত শাহ্জালাল (র.)
দলীল ও ভাষ্য
দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী
প্রকাশনায়: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ইফাবা গ্রন্থাগার: ৯২২.৯৭, ১৯৯২
ISBN: 984-06-0575-5.
৩। প্রাচ্য-সূর্য
আলী মাহমুদ খান
প্রকাশক এনাম মাহমুদ
খান, ডাঃ ওয়ালী মাহমুদ খান,
শামুন মাহমুদ খান, জুন্নুন মাহমুদ খান
খান কটেজ, দরগাহ্ মহল্লা ,সিলেট।
৪। আমাদের সূফিয়ায়ে কেরাম
সম্পাদনায়ঃ দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী
প্রকাশক: পরিচালক, প্রকাশনা বিভাগ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ISBN: 984-06-0374-4.
৫। হযরত শাহ্জালাল কুনিয়াভি
এ.জেড. শামসুল আলম
প্রকাশনায়ঃ খোশরোজ কিতাব মহল লিঃ, ঢাকা।
৬। শ্রীহট্টে ইসলাম জ্যোতি
মুফতি আজহার উদ্দীন সিদ্দিকী
পঞ্চম সংস্করণ:২০০২
প্রকাশকঃ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া
দরগাহ্ মহল্লা, সিলেট।
৭। দরবেশ শাহ্জালাল(রাঃ)
এস.এম.শরীয়তুল্লা,
প্রকাশকঃ আলহাজ্ব মুহাম্মদ বশির মিয়া
ভাটিপাটা,বিশ্বনাথ,সিলেট।
৮। ইসলামী বিশ্বকোষ
ইফাবা,২য় সংস্করন, ২য় খন্ড।