Sunday 26 May 2013

আজ বুরুঙ্গা গণহত্যা দিবস

মোঃ কয়েছ মিয়া :: আজ ২৬ মে রবিবার সিলেটের ওসমানীনগরের বুরুঙ্গা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে স্বাধীতা যুদ্ধ চলাকালে আজকের এদিনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস ওসমানীনগরের বুরুঙ্গা ইউনিয়নের ৭৮ জন নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের সবুজ ঘাস। ১৯৭১
সালের এই দিনে থানার নিভৃত পল্লী বুরুঙ্গায় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় ৭৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে পাকবাহিনী। শান্তিকার্ড প্রদানের কথা বলে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের।
জানা যায়, ওই দিন স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা ঘোষণা করে, বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি সভার মাধ্যমে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সবাইকে পরিচয়পত্র হিসেবে শান্তিকার্ড (ডান্ডি কার্ড) প্রদান করা হবে এ ঘোষণায় সকাল ৮টা থেকেই বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশের প্রতিটি গ্রাম থেকে লোকজন উপস্থিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে নিজ করনসি গ্রামের আবদুল আহাদ চৌধুরী (ছাদ মিয়া) ও ছোট হাজীপুর গ্রামের ডা. আবদুল খালিকসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন নূর উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানি সৈন্য বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে বিদ্যালয়ের চারদিকে অবস্থান নেয়। আর একদল পার্শ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে পুরুষদের সভায় আসার তাগিদ দেয় এবং লুটপাট করে, চালায় নারী নির্যাতন।
সকাল ১০টায় পাকসেনারা সমবেত লোকজনকে দুই ভাগে ভাগ করে বিদ্যালয়ের উত্তর ও পূর্ব দিকের ভবনে নিয়ে যায়। জনৈক এলাইছ মিয়াকে দিয়ে জোরপূর্বক রশি আনিয়ে শতাধিক সমবেত লোকজনকে পিঠমোড়া করে বেঁধে ফেলা হয়। এ সময় প্রধান শিক্ষক প্রীতি রঞ্জন চৌধুরী, শিক্ষক নিবাস চক্রবর্তী কৌশলে স্কুলঘরের জানালা খুলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। দুপুর প্রায় ১২টায় বন্দিদের বিদ্যালয়ের সামনে সবুজ চত্বরে একটি গাছের নিচে বসানো হয়। ক্যাপ্টেন নূর উদ্দিন খানের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলিবর্ষণ শুরু হলে মুহূতের্র মধ্যে ঝরে পড়ে ৭৮টি প্রাণ। রক্তে লাল হয়ে যায় সবুজ চত্বর। আহত হন অনেকেই।
পরদিন ২৭ মে সকালে লাশগুলো পাশেই একটি গর্ত করে পুঁতে রাখা হয়। এ নির্মম পৈশাচিক হত্যাকান্ডের কথা ওসমানীনগরের মানুষ আজও ভুলতে পারেনি। পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সে দিন বাবা ও এক ভাই হারানো বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিবাস চক্রবর্তী বলেন, 'মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও প্রতিরোধের চিন্তা কারো কারো মাথায় এসেছিল। কিন্তু পরিবার পরিজনের কথা ভেবে কিছু করা যায়নি। ব্যবসায়ী জিতেন্দ্র কুমার বৈদ্য জানান, পায়ে গুলি লেগেছিল, মরার ভান করে লাশের স্তূপের নিচে পড়ে থেকে প্রাণ বাঁচাই। দীর্ঘদিন এই গণকবরটি অবহেলিত ছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর উদ্যোগে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।