Sunday 1 September 2013

আজ বঙ্গবীর ওসমানীর ৯৫তম জন্মদিন

মোঃ কয়েছ মিয়া :: আজ পয়লা সেপ্টেম্বর বঙ্গবীর ওসমানীর ৯৫তম জন্মদিন। যার সময় নেতৃত্বে একাত্তরে এদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটে এই ক্ষণজন্মা পুরুষটি ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেও জাতিকে উপহার দিয়েছেন হাজার বছরের প্রত্যাশিত নতুন ভূ-খন্ড স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ তার জন্মদিন। ১৯১৮ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ
করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার ওসমানীনগর থানার দয়ামীরে। একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ওসমানী জন্মেই অসাধারণ হয়ে ওঠেন নি। তিনি তাঁর কর্ম দিয়ে বরণীয় হন, স্মরণীয় হন এদেশের মানুষের কাছে। আমরা তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাচ্ছি শ্রদ্ধা। পুরো নাম বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সামরিক নেতৃত্ব দেন। অসাধারণ বীরত্ব আর কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তিনি পশ্চিমাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করেন। সেই সঙ্গে তনি ছিলেন আজীবন গণতন্ত্রী, ধার্মিক ও খাঁটি দেশপ্রেমিক। তাঁর নামটি বাদ দিলে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস রচনাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই অসম্পূর্ণ ইতিহাস রচনারই হীন প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এদেশে। সুপরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে বঙ্গবীর ওসমানীকে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন, তেমনি স্বাধীন দেশেও জাতির দুঃসময়ে ওসমানী কান্ডারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অনেক সময় তিনি জাতিকে নির্ঘাত সংঘাত থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন। অথচ তিনি কখনও রাষ্ট্রক্ষমতা চান নি। বঙ্গবীর ওসমানী ১৯৩১ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। পরের বছরই তিনি সামরিক শিক্ষা শেষ করে বৃটিশ কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৪১ সালে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৪২ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন। তিনিই ছিলেন তখনকার বৃটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হয়ে সামরিক ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি আত্মনিয়োগ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী গঠনে। এ সময় তিনি ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল পদে উন্নীত হন। ১৯৫৭ সালে উন্নীত হন কর্ণেল পদে। ইপিআর প্রতিষ্ঠায় রয়েছে তাঁর বিশাল অবদান। তারই ধারাবাহিকতায় একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর ওপর। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে তিনি দু’বার জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবীরের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, আমাদের কলুষিত রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবীর ওসমানীর অবদানকেই যেন প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা হয়েছে। অথচ আমাদের অস্থির বিশৃংখল রাজনীতিতে ওসমানীই এখন অনুপ্রেরণা হতে পারেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে ওসমানীকে সকল দল ও মতের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হোক। ব্যক্তিগত জীবনে চিরকুমার এ দেশবরেণ্য ব্যক্তি ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের সেন্ট্রাল হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রত্যক্ষ্যদর্শী এক ক্ষণজন্মা পুরুষের সংগ্রাম মুখর জীবনের, আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের একটি অংশের। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।