Sunday 25 November 2012

হায় হুসাইন হায় হাসাইন ধ্বনিতে মুখরিত শানে পাঞ্জাতন


মোঃ কয়েছ মিয়া ::
আজ রবিবার ওসমানীনগরে তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে পবিত্র আশুরা। এই দিনে মুসলিমগণ পবিত্র কোরআন খতম, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, রোজা পালন, গরিবদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করছেন। মসজিদে মসজিদে আলোচনা সভা, জিকির ও
মিলাদ মাহফিলের আয়োজন ছিল। শানে পাঞ্জাতনগুলোতে শেষ দি ১০ই মহররম রবিবার ‘হায় হুসাইন হায় হাসাইন’ ধ্বনিতে ভারী হয়ে উঠে ছিল এলাকার আকাশ-বাতাস। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ নারী-পুরুষ সবাই একত্রে মাতম করছেন শানে পাঞ্জাতনে বুক চাপড়ে। এবার ওসমানীনগরে পবিত্র আশুরার জারি ও তাজিয়া মিছিল পালিত হয়েছে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পীর ওয়াছিদ আলীর বাড়ী পাঞ্জাতনের মোকাম, মোতিয়ার গাঁও পাঞ্জাতনের মোকাম, এওলাতৈল পাঞ্জতনের মোকাম, নিজ করনসী পূর্বপাড়া পাঞ্জাতনের মোকাম, উমরপুর ইউনিয়নের বড় ইসবপুর পীর বাড়ী, সাদিপুর ইউনিয়নের গজিয়া ও ইব্রাহিমপুর মোকাম। কাল, দুপুর ও গভীর রাত পর্যন্ত চলছিল মাতম, জারি, সঙ্গে রোজা ও নফল নামাজ, ইবাদত বন্দেগি ও শিরনী বিতরণ।
উল্লেখ্য যে, হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কনিষ্ঠ দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এজিদ বাহিনীর হাতে স্বপরিবারে শাহাদাৎ বরণ করেন। অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হিসেবে এই শোক ও ত্যাগের দিনকে প্রতিবছর স্মরণ করেন সারাবিশ্বের মুসলমান। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে তাঁদের এ আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এ শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদেরকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আজও অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রেরণা জোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার। এসব হৃদয় বিদারক ঘটনায় বিভিন্ন কবি, লেখকগণ ভাবগাম্ভীর্য ভাষায় লিখে গেছেন অনেক হৃদয়বিদারক বাণী। বিদ্রোহী কবি নজরুলের ভাষায় ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না’।
ইসলামী স্টাডিজ ও হাদিসে থেকে জানাযায়, সমগ্র ইসলামী জাহানের অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও বেদনাদায়ক ঘটনা হচ্ছে ১০ মহররম। এই দিনে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র এবং ইসলামের অতন্দ্রু প্রহরী হযরত ইমাম হাসান হোসাইন কারবালার ময়দানে ইসলামের চিরশত্রু ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরন করেন। সেই দিন হতে বিশ্বের সকল মুসলমানগন দিবসটিকে শোকাবহ দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। এই দিনটি বহু বর্ণিল এবং বৈচিত্রময় ঘটনায় সমৃদ্ধ। একদিকে শোক, অন্যদিকে পুণ্য। কারবালার শোকাবহ করুণ স্মৃতিবিজড়িত ১০ মহররম কেবল ইসলামের ইতিহাসেই নয়, সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসের অনন্য সাধারণ দিবস হিসেবে পরিগণিত। ইতিহাস কারবালার মর্মান্তিক বেদনাদায়ক ঘটনা এ দিবসকে আত্মোৎসর্গ আর ন্যায়-নীতির সত্য-সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেতনায় সমুজ্জ্বল করে রেখেছে। সে সঙ্গে অন্যায়-অনাচার-অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে দিবসটি যুগযুগ ধরে।
বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ওফাতের বহু বছর পর ফোরাত নদীর তীরে তারই প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং হজরত আলী (রা.) ও মা ফাতেমার (রা.) দ্বিতীয় পুত্র হজরত ইমাম হুসাইনের (রা.) শাহাদাৎবরণের ঘটনায় এ দিবসকে দিয়েছে নতুন মাত্রা, নতুন মর্যাদা। সৃষ্টি করেছে অনন্য ইতিহাস। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬১ হিজরির এই সেই দিবস, যেদিন অপশক্তি-অন্যায়-অসত্যের কাছে মাথানত না করে সত্য-সুন্দর-ন্যায়ের পথে লড়াই করে বীরের মতো পরিবারের অনেক সদস্য ও সহচরকে নিয়ে শাহাদাৎবরণ করেন হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)। সেই দুঃখময় স্মৃতি আজো বিশ্ব মুসলিমকে কাঁদায়। সে সঙ্গে প্রেরণা জোগায় ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়-অনাচার অসত্য-অসুন্দরের বিরুদ্ধে আমরণ সংগ্রাম করার।
এই দিনে হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এবং হজরত আলী (রা.) এর পরিবারের বিশ জন শিশু-কিশোর যুবকসহ মোট ৭২ জন মর্দে মুজাহিদ কারবালার প্রান্তরে ফোরাতের দু’কূল ছাপা নদীর কিনারায় এক বিন্দু পানি হতে বঞ্চিত হয়ে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছিলেন। রাসূল (সা.)-এর দৌহিত্র হুসাইন (রা.)-এর পবিত্র মস্তক নিষ্ঠুর নরাধম শিমার ছিন্ন করে কুফার দুরাচার ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের দরবারে প্রেরণ করেছিল। এই দিন হজরত আদম (আ.) এর তওবা কবুল হয়, মহাপ্লাবনের পর নূহ নবীর কিশতী(নৌকা) সর্বপ্রথম মাটির সংস্পর্শ লাভ করে এ দিনে, হজরত ইব্রাহীম (আ.) ভূমিষ্ঠ হন। হজরত দাউদ নবীর তওবা কবুল হয়, হজরত আইয়ুব নবীর রোগ-যাতনা উপশম হয়, মুসা নবীকে আল্লাহ উদ্ধার করেন, ইউনুছ নবীকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দান করেন, ঈশা নবীকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয় এ দিনেই। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ       পরিবার-পরিজনের জন্য মুক্ত হাতে ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে সারা বছর সচ্ছলতা দান করবেন।
এই দিন সম্পর্কে পীরজাদা শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন আশুরার প্রথম থেকে দশম তারিখ পর্যন্ত যদি কোন মুসলমান রোজা রাখেন তাহলে হাদিসে বর্ণিত সে ব্যক্তি জান্নাতুল ফেরদাউসের ওয়ারিসদার হবে। এছাড়া আরো অনেক ফজিলত রয়েছে এই দিন সম্পর্কে।