Sunday 19 January 2014

হয়ে গেলো নির্বাচন : রয়ে গেল অনেক কথা

আব্দুল হাদী :: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে হয়ে গেল গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ইংরেজিতে। অনেক কথা, অনেক স্মৃতি থেকে গেলো। দেশের বৃহৎ একটি অংশ বাদ দিয়ে নির্বাচন হওয়াতে আলোচনা কিংবা সমালোচনা থাকারই কথা। যে
সময়টুকু অতিবাহিত হচ্ছে তাতে শংকা বাড়ছে  না কমছে কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। তবে এটা বলা যাচ্ছে অনেকের রাগটাকে চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। অপরাধীকে একেবারে নির্মূল না করতে পারলে এদের পেছনে অযতা সময় নষ্ট করে কি লাভ। সর্বত্রই এখন একটি কথা শুনা যাচ্ছে, সবার স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে, অনেকেই বলছেন স্বাধীন দেশে বেচে আছেন পরাধীন ভাবে।
কেউ কোন কিছু যদি বলতে পারে তাহলে তার রাগ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু যদি তাকে দমিয়ে রাখা হয় তাহলে অনেকটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারো যদি কোন অস্তিত্ব থাকেনা তখন সে মরিয়া হয়ে উঠে তখন আর তাদেরকে নির্মূল করা অনেক কষ্ট হয়ে পড়ে। হিতে-বিপরিত হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে বেশি। কেননা মানুষের ভেতর চাপা রাগ যে কোন সময়  প্রকাশ পেতে পারে, তখন কিন্তু বড় কোন বিপদ ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। দেশে যারা ক্ষমতাধর আছেন তারা হয়তো চিমত্মা ভাবনা করছেন এরকম ঘটনা থেকে দেশকে বাচিয়ে রাখার জন্য। সাধারন জনগণের প্রাপ্তি বেশি নয় তারা চায় স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে পারলেই হলো।
বিগত নির্বাচনটি নিশ্চয় ইতিহাসে লেখা থাকবে। এ অধ্যায়টি কলংকিত ভাবে থাকবে না ভালো হয়ে থাকবে, যখন ইতিহাসটা অতিত হয়ে যাবে তখন নিশ্চয় ইতিহাসই স্বাক্ষী দেবে। কেহই কলংক যুক্ত হতে চায়না মুক্ত থাকতে চায়। কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে কিংবা ক্ষমতা দেখিয়েতো আর সাধু থাকা যায়না। কোন কিছুইতো গোপন থাকেনা, হঠাৎ করে সব খবর পাশ হয়ে যায় তখনতো আর কোন পথ থাকেনা। মাতৃভূমির সব দরদ ভূলে নিজের প্রাণ বাচাতে হয় অন্য কোন রাষ্ট্রের অবৈধ কিংবা বৈধ বাসিন্দা হয়ে। এরকম অনেক হয়েছে আমাদের স্বাধীন দেশে। সারা জাতি জানে দেশের মানুষ এবং দেশকে নিয়ে যারা অনেক চিমত্মা করতেন  এবং গলা ফাটিয়ে বক্তব্য দিতেন তারা ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন সেই কবে আর দেশে ফেরেননি। তাইতো সবাই এখন বুঝে এ সব কিছুই মিথ্যা প্রহসন মাত্র।
দেশের নির্বাচন যাই হোক না কেন সিলেট-২ আসনের ( বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) এলাকার নির্বাচনি আলোচনাটা অনেক রহস্যময়। এখানকার রাজনীতি অনেকটা গুলাটে। এ আসনে সংসদ সদস্য অতিতে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে, আশরাফ আলী, লুৎফুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমান, মকসুদ ইবনে আজিজ লাম, শফিকুর রহমান চৌধুরী সবাই এখনো নিজ নিজ দলের জন্য কাজ করছেন। এছাড়াও এ আসনের সবার সাথে তাদের নিবীড় সম্পর্ক রয়ে গেছে। সাংসদ আলহাজ্জ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী এবারের নির্বাচনে সাংসদ হওয়ার কথা থাকলেও তাকে বাদ দিয়ে মহাজোট থেকে ইয়াহইয়া চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। একতরফা নির্বাচন হওয়াতে তিনিও এমপি হয়ে গেছেন। যেভাবেই হোক দেশের ইতিহাসে এ আসনের সাংসদ হিসাবে নাম লিখিয়ে নিয়েছেন তিনি।
সবার ভিড়ে নামটা লেখা হয়নি সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলীর তার অনেকটা কারণ রয়ে গেছে। ২ বছরের কাছাকাছি সময় হয়ে যাচ্ছে তিনি গুম হয়েছেন, আজ অবধী তাকে ফিরে পাওয়া যায়নি। কে বা কারা তাকে গুম করেছে তার কোন হদিস আজো মেলেনি। সারা দেশে আন্দোলন হয়েছে তাকে নিয়ে। কিন্তু তার নির্বাচনী এলাকায় আন্দোলনটা অনেক জোড়ালো ভাবেই হয়েছে। একাধীক ব্যক্তি প্রাণ দিয়েছেন তার সমর্থনে। এখনো পর্যমত্ম উক্ত আসনটিতে তার সন্ধান দাবীতে চলছে নানা কর্মসূচী। আ’লীগ কিংবা জাতীয় পার্টি নির্বাচন নিয়ে ব্যসত্ম থাকলেও এখানকার মানুষ ইলিয়াস কে ফিরে পাওয়ার দাবীতে অনড়। তার প্রমাণও দিয়েছে বিশ্বনাথের রামধানা ভোট কেন্দ্রে কোন ভোটাররা ভোট না দিয়ে।
একজন সাবেক সাংসদ গুম হওয়া নিশ্চয় দেশের ইতিহাসের জন্য একটা কলংক জনক অধ্যায়। একজন নেতাকে যদি এভাবে গুম করে রাখা হয় তাহলে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা কি এদেশের কোন সরকার কিংবা প্রশাসন কখনো দিতে পারবে কোন দিন। তার না থাকাটা বুঝতে পারছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগটন গুলো। এছাড়াও আওয়ামীলীগ কিংবা অন্যান্য দলগুলো যদি দলীয় ভাবে তাকে ভালো না পেয়ে থাকেন তবুও মুখটাকে অন্যদিক সরিয়ে বলেন তিনি নেতার যোগ্য একজন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে এভাবে গুম করাটা ঠিক হয়নি, তার দ্বারা অনেক উন্নয়ন হয়েছে সিলেট-২ আসনে। নির্বাচনের সময় পুরোটা দাপঠ দেখানোর কথা থাকলেও কোথাও কোন জুরালো আন্দোলন করতে দেখা যায়নি কোন নেতা কর্মীকে। তার কারণ নেতা না থাকাতে সকল নেতা কর্মী দিশেহারা হয়ে আছেন। এছাড়াও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনেও গৃহ বন্দি অবস্থায় আছেন নেতাকর্মীরা।
মূল আলোচনা হচ্ছে বিগত ৫ জানুয়ারীর সিলেট-২ আসনের নির্বাচন। বিগত নির্বাচনের সময় নৌকার পালে যে হাওয়া লেগেছিলো তাতে ধানের শীষ কিংবা তার সমর্থন কারীরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিলো।এই সুবাধে এখানকার এমপি হয়েছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। কিন্তু এ আসনে ইলিয়াস আলীর সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি এমপি হবেন এটা প্রথম পর্যায়ে কেউ মেনে নিতে পারেননি। শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংসদ হওয়ার পর প্রাথমিক ভাবে তাকে কেউ ভালোভাবে না চিনতে পারলেও পরবর্তিতে দলের নেতাকর্মীর কাছে তিনি আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে ধরে তুলেছিলেন। বিশেষ করে কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ চারিতায় কখনো কোন অহংকার করতেন না। কিংবা কারো সাথে কোন খারাপ আচরণ করেননি। এর সুবাধে তাকে বাদ দিয়ে ইয়াহইয়াকে মনোনয়ন দেওয়াতে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল সহ রাজপথও অবরোধ করেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। মহাজোটের সিন্ধামেত্মই ইয়াহইয়াকে চুড়ামত্ম প্রার্থী করা হয়।
শফিক চৌধুরীর পক্ষে আওয়ামীলীগের আন্দোলনকে নিজের লাভ ধরে নিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান। নিজের ব্যক্তিত্ত্বকেই বড় বলে দেখেছিলেন তিনি। নির্বাচনের আগে পথ সভা এবং নির্বাচনী প্রচারনাতেও প্রতিনিয়ত বিদ্রোহী বক্তব্য দিয়েছেন। তার সাথে যারা ছিলেন তারা মনে করেছিলেন তিনিই এবার সাংসদ হবেন। ইয়াহইয়ার জনপ্রিয়তা না থাকা, বিএনপি নির্বাচনে না আসা, আওয়ামীলীগের মধ্যে একটি বিদ্রোহী গ্রুপর সৃষ্টি হওয়া, এসব কিছুকেই তিনি নিজের পুঁজি হিসাবে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যমত্ম তার চিমত্মার বিপরিত হয়ে গেলো। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নির্বাচন বয়কট করলো আর তার একান্ত সমর্থন কারী দু-একজন নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে যেতে চাইলেও পুলিশি হয়রানীর কারণে কিংবা আ’লীগ নেতাদের ভয়ে ভোট কেন্দ্রের ধারে কাছেও যেতে পারেনি। আওয়ামীলীগের উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তি যারা তারা সবাই এক হয়ে গেলেন যেভাবে হোক এখানে মহাজোট প্রার্থীকে জয়ী করতে হবে। শেষ পর্যমত্ম তাদের ক্ষমতাই কাজে লাগিয়ে ইয়াহইয়াকে সাংসদ বানিয়ে দিলেন। মুহিবুর রহমানের এ নির্বাচনে আসাটা বোকামীর দন্ড হিসাবেই ধরে নেয়া যায়।
মুহিবুর রহমানের লড়াইটা ছিলো শফিকুর রহমান চৌধুরীর সাথে, কিন্তু তিনি যদি এ লড়াই না করতেন তাহলে এ আসনে নির্বাচন হতোনা সাংসদই রয়ে যেতেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। কিন্তু শেষ পর্যমত্ম কি হলো, তুমিও নাই-আমিও নাই, কেমন মজা হলো। এ ধরনের মজা আর গুম হওয়া নেতার অপেক্ষা আর কতদিন চলবে। প্রতিটা রাজনৈতিক দল কখন এক নেতার আদেশ মেনে চলবে। যেখানে থাকবেনা কোন গ্রুপিং- দ্বিধা দ্বন্দ্ব, শুধু মাত্র চিমত্মা থাকবে জনসাধরনের ভাগ্যের উন্নয়ন নিয়ে।
নতুন ভোটার যারা হয়েছে তাদের কাছে স্বরণীয় হয়ে থাকবে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের দিনটির কথা। এছাড়াও যারা একতরফা নির্বাচন কখনো দেখেননি তারাও দেখেছেন এবারের নির্বাচন কিভাবে হয়েছে। যারা নির্বাচনের সময় নেতৃত্বের প্রভাব দেখিয়েছেন তারাও নিজেদের অনেক বড় নেতা বলে দাবী করছেন। কিন্তু তাদের এসব কথার আড়ালে অনেক হাস্যকর কথা ঘুরাফেরা করছে তা তারা শুনেও না শুনার বান করছেন। যা হলো আর এবার যা হবে তাতে সিলেট-২ আসনের সাধারণ জনগণ তেমনটা সূখি নয় । যে নির্বাচন হয়েছে সেটাকে ফালতু একটা জামেলা বলে দাবী করছেন একেবারে খেটে খাওয়া দিনমজুরও। সরকার এবং বিরোধীদলের মধ্যে দর কষাকষী চলছে না আলোচনা চলছে কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার সংগ্রাম আর ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম চলছে তা যারা টেবিলে বসে আলোচনা করছেন তারা ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন।

যদি দেশে সর্ব দলীয় নির্বাচন হয় তাহলে সিলেট-২ আসনের নির্বাচনটা কিভাবে হবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। বিএনপি নেতা ফিরে না আসলে বিএনপি থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, মহাজোট থেকে কে আসবেন? আবারও কি ইয়াহইয়া থাকবেন না শফিকুর রহমান চৌধুরী আসবেন?  না কি অন্য কাউকে দেয়া হবে? এরকম হলে মুহিবুর রহমান কোথায় যাবেন? নানা রকম প্রশ্ন প্রতিটা মানুষের ভেতর কাজ করছে। নির্বাচন হলেও সেটার দিকে কারো কোন খেয়াল নেই যিনি সাংসদ হয়েছেন তাকে নিয়েও কারো তেমন আলোচনা কিংবা সমালোচনা নেই। নির্বাচন পরবর্তি আলোচনা হচ্ছে এখানে নির্বাচন স্বচ্ছ হয়নি। কেন হয়নি তার কারণ কেউ কেউ লুকিয়ে বললেও অনেকে ক্ষোভে প্রকাশ করে বলেন,  টাকার বিনিময়ে সব কিছু হয়েছে। এখন সবারই একটি কথা নির্বাচন হয়েছে টিকই কিন্তু রয়ে গেছে অনেক কথা। কবে শেষ হবে এসবের ,আসবে কি সিলেট-২ আসনে একজন যোগ্য নেতা, যে রাজনীতিকে সম্পূর্ন ভাবে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করবে। যেখানে থাকবে স্বচ্ছ রাজনীতি, হবেনা প্রতিহিংসায় কোন প্রাণহানী, জালিয়াতী, থানার দালালী, হরন করা হবেনা সাধারণ মানুষের ক্ষমতা, কোন লোটেরা লোট করে খাবেনা কোন গরীবের হক।