আব্দুল
হাদী :: রাজনৈতিক
উত্তাপ চারিদিকে, হরতাল, জ্বালাও পুড়াও নিত্য দিনের ঘটনা। এ সবের দায় কার?
প্রশ্নের উত্তরটা সবাই এড়িয়ে যায়। সাধারণ জনগণ বুঝে এটা ক্ষমতার লড়াই কিন্তু কিছুই
করার নেই। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সকলেই
একটা না একটাতেই জড়িয়ে যায়। সবার মনে
একটাই আতংক নির্বাচন কিভাবে হচ্ছে, পাঁচ তারিখের নির্বাচন কিভাবে হবে।
আওয়ামীলীগ
কি আবারো ক্ষমতায় ঠিকে থাকবে? বিএনপি কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না? জামায়াতের
রাজনীতি কি দেশে চলবে, না বন্ধ হয়ে যাবে? নানা প্রশ্ন সাধারণ জনগনের মাঝে,
কোন প্রশ্নেরই উত্তর নেই শুধুই আতংক। কবে শেষ হবে এসব চিন্তা। রাজনৈতিক নেতাদের
সংখ্যার চেয়ে ভোটারের সংখ্যা নিশ্চয় বেশি। আর অধিকাংশ ভোটারের বসবাস হচ্ছে মফস্বল
বা পল্লী এলাকায়।
৬৪
হাজার গ্রাম নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে হয়তোবা ১০ কোটির
বসবাস মফস্বলে। এ সবের মধ্যে পড়ে রয়েছে অসংখ্য অবহেলিত জনপদ। বেশিরভাগ মানুষকে
তাড়া দিচ্ছে অভাব, ক্ষুধার যন্ত্রনা, শিক্ষার অভাব, বৈদ্যুতিক আলো ইত্যাদি। এসব
থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য অবহেলিত মানুষরা রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় নেয়। আর এ
সুযোগে নেতারা তাদেরকে পকেটে ভরে নেয়। নিজস্ব মানুষ বানিয়ে যা ইচ্ছে তা করিয়ে
ছাড়ে। নির্বাচন আসলে মফস্বলের অবহেলিত মানুয়ের কদর বেড়ে যায়। নেতারা ভোট ব্যাংক
বাড়াতে তাদের দ্বারে দ্বারে গুর গুর করেন। নির্বাচন আসলে ক্ষমতায় যারা থাকেন তাদের
বক্তব্য হলো, আমরা ক্ষমতায় ছিলাম দেশ এবং দশের উন্নয়ন করেছি। এলাকায় কত উন্নয়ন হয়েছে বিগত সরকার কোন উন্নয়ন করেনি। যদি উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতে চান তাহলে
আমাদের আবার নির্বাচিত করুন। যত গুলো উন্নয়ন বাকি আছে তার সবগুলো আমরা করে দেবো।
অপর
দিকে বিরোধী দলে যারা থাকে তাদের কাজ হলো ক্ষমতাসীনদের দোষ খোঁজে বেড়ানো।
তারা কি করলো, কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো সেগুলোর বাসত্মবায়ন না হলে এগুলো সাধারণ
জনগণের কাছে পৌছে দেওয়া। নির্বাচন আসলে তাদের বক্তব্য হলো সরকার আমাদের ঘরে ঘরে খাবার
পৌছে দেওয়ার কথা বলেছিলো, কিন্তু তা তারা করেনি। আমরাই এবার ক্ষমতায় যাবো আমাদের
ভোট দেন সবাইকে স্বনির্ভর করে তুলবো কোন অভাব থাকবে না, যত উন্নয়নের দরকার সব করে দেবো। শিক্ষা জাতীর
মেরুদন্ড, যারা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে তারা ভাবসম্প্রসারনে বিষয়টি
একাধীক শ্রেণীতে পড়ে। যারা এটা পড়েছে তারা কিছুটা না হয় শিক্ষার কদর বোঝার চেষ্টা
করে এবং কিভাবে সমাজে চলাফেরা করতে হয়, মানুষের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করতে হয়, কিভাবে
সমাজের উন্নয়ন হয়, কে মিথ্যা বলছে আর কে সত্য বলছে তা বুঝার ক্ষমতাটুকু হয়। কোথায়
ক্ষমতার মিথ্যা প্রহসন আর কোথায় সত্যর শাসন তাও বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু আবহমান
বাংলার মফস্বলগুলোতেই মূর্খ লোকের সংখ্যা
বেশি। তাদের কাছে গিয়ে যদি কেউ বুঝিয়ে কোন কিছু
বলতে পারে তাহলে তারা তার পক্ষে। আবার যদি অন্য কেউ গিয়ে অন্য কিছু বুঝিয়ে বলে
তাহলে তারটা ঠিক হয়ে যাবে। সে বুঝার চেষ্টা করেনা কোনটা ঠিক। তার বর্তমানটাই তার
কাছে ঠিক। যতক্ষন পর্যমত্ম পুরো জাতি শিক্ষিত না
হবে ততক্ষন পর্যমত্ম এ দেশের রাজনীতিতে কোন সুস্থ ধারা আসবে না।
সাধারনত
দেখা যায় কেউ যদি সমাজে কোন দায়িত্ব ছাড়া চলাফেরা করে তাহলে সে সমাজের ভালো একজন
লোক হিসেবে থাকতে পারে। এবং তার জনপ্রিয়তাও থাকে বেশি। কিন্তু যদি তাকে কোন
দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে তার জনপ্রিয়তা অর্ধেকে নেমে আসে। আসেত্ম আসেত্ম সে
একেবারে একা হয়ে যায়। তার মূলেও কাজ করে মূর্খতা। যে দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য তাকে
নিশ্চয় দায়িত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু সমাজের
হিংসুক মূর্খরা তাকে এক ঘরে করে দেয়, কেননা সমাজে এদের সংখ্যাই বেশি। এর দ্বারা
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকেও ছাড়েনি। যে দল ক্ষমতায় যায় সে জনপ্রিয়তা নিয়েই যায় আবার
তার ক্ষমতার দাপটে জনপ্রিয়তা কমে যায়। এই কমে যাওয়া আর বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো
মফস্বল রাজনীতি। গ্রামের সাধারণ মানুষ কখনো ভালো চোখে দেখবে একজনকে, কিন্তু যখন
দেখবে তার কোন লাভ হচ্ছেনা তখন আবার সে পাল্টে যাবে। মফস্বলের জনসাধারণের ভোট নদীর স্রোতের
মতো। এই নৌকায় পাল তুলবে আবার ধান রোপন করবে।
রাজনৈতিক
নেতারা যত বেশি প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে মফস্বলের মানুষ ততই আশাবাদী হবে। এটা
মিথ্যা হউক আর সত্য হউক, সেদিকে খেয়াল নেই। কোন নেতা কি বললো, যে নেতা কথা বললো
তার মাপকাঠি কতটুকু, সেটুকু দেখার সময় নেই। চাপায় একটু জোর হলেই মফস্বলে রাজনৈতিক
নেতা হওয়া যায়। কেননা এখানকার মানুষ বোকার স্বর্গেই বাস করে। দেশের সার্বিক
পরিস্থিতি নিয়ে গ্রামের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বিশেষ করে এখন মসজিদগুলো। মসজিদে
আলোচনা করার একটি কারন আছে। হেফাজতে ইসলামের
ঘটনা দেশকে নাড়া দিয়েছে। সমাবেশটিতে অংশ
গ্রহণ করেছে বেশির ভাগ জনসাধারণ। তারা ইসলামের ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিলেন। যদি মরে
যেতেন তাহলে শহীদ হতেন। আর বর্তমান আ’লীগ সরকার ইসলামের উপর আঘাত করছে বেশি এটা
জনসাধারণকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্নভাবে। তাইতো ইসলাম প্রিয় মানুষ অপেক্ষায় কবে আ’লীগ সরকারের পতন হবে।
দেশের
রাজনৈতিক দ্বারা কবে সুষ্ট হবে তা শিক্ষিতজনদের ভালো করেই জানা আছে। যে জাতি যত
বেশি শিক্ষিত সে জাতী তত উন্নত।হরতাল আর এলোমেলো রাজনৈতিক প্রভাব এখন পুরোটাই
গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা অনেক সময় গ্রাম থেকেই শুরু হয়। এটা আস্তে আস্তে শহর পর্যন্ত গড়ায়। এসব
প্রতিহিংসার কারণ হচ্ছে শিক্ষার অভাব এবং বেকারত্ব। যে লোক সকাল বেলা ঘুম থেকে উটে
কাজের খুঁজে বেরিয়ে পড়ে সারাদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে, তার আর রাজনৈতিক কথা বলার সময় থাকেনা। দিনের ক্লান্তি শেষে রাতের ঘুম আবার কাজ এরকম মানুষের কাছ থেকে কখনো রাজনৈতিক কোন আলোচনা
কিংবা সমালোচনা শুনা যায় না।
৬৪
হাজার গ্রামের মধ্যে যদি ১টি গ্রামের হিসাবে ধরে নেওয়া যাক। একেবারে ছোট একটি
গ্রামে সাধারণত হাজারের অধিক লোকের বাস হয়। সেখানে বেকারত্বের সংখ্যা থাকে শতাধিক।
উঠতি বয়সের ছেলের সংখ্যাও থাকে শতাধিক। এই ২শ মানুষ থেকেই যত বিপত্তি। এদের কাছ
থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ২শ ছাড়া মহিলা এবং পুরুষের মধ্যে নিরক্ষর
অর্ধেকের চেয়ে বেশি। এই এক হাজার লোককে নিয়েই নেতাদের রাজনীতি। এরকম লোকের কাছ
থেকে কেমন রাজনীতি আশা করা যায়? সাধারণ জনগণ যখন বিরক্ত হয় তখন সে নিজের অজান্তেই বলে কত ভোট দিলাম কোন কিছুইতো হলোনা। পাস করার পর কেউ আর কাছে আসেনা, ভালোমন্দের
কোন খোঁজ নেয়না। কি হবে ভোট দিয়ে, সব নেতারা শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
বিরক্তির চাপটা আবার কেটে যায় যখন মিথ্যুকেরা এসে মিথ্যা কথা বলে।
সাধারণ মানুষ অল্পতেই তুষ্ট । তাই তাদের নিয়ে যেভাবে ইচ্ছে রাজনীতি করা যায়।
বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলাম যারা করে তারা মনে প্রানে দলকে ভালোবাসে, তারা বিহীন অন্য কেউ তেমন
একটা দলটিকে ভালোবাসেনা । বর্তমান সময়ে মনে হচ্ছে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলছে দলের নেতা কর্মীরা। দলের সাথে যারা সম্পৃক্ত
তাদের বড় নেতাদের তাগিদে নামাজ পড়তে হয়। নামাজ না পড়লে দলটা পাকাপুক্ত হয়না। তাইতো
মসজিদগুলোকে তারা রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহার করে। ক্ষমতা যা আছে তার চাইতে
বেশি বলে আর সাধারণ মানুষ এতে তাদের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। বাস্তবে বাংলাদেশে
সাধারণ কোন মানুষের জনসমর্থন নেই দলটির প্রতি। তবুও তারা দেশটাকে আতংকিত করে
তুলছে। কবে শেষ হবে সাধারণ জনগণের এতো চিন্তা? দেশ কোন পথে যাবে? কে হবে প্রধান
মন্ত্রী? যেভাবে শুরু হয়েছে যদি সেভাবে চলতে থাকে তাহলে দেশের প্রত্যেক গ্রামে রাজনৈতিক আলোচনা চাঙ্গা হবে। তাতে গৃহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে দেশের
স্বার্থবাদী মহল। যারা উচ্চ আসনে বসে দেশের সার্বিক বিষয়ের দেখা শুনা করেন তারা
যদি দেশ রক্ষার ভূমিকা নেন তবেই হয়তো সাধারণ মানুষ বেচে যাবে।
শস্য-শ্যামল
জন্মভূমিকে সবাই সূখি ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে চায়। মফস্বলে যারা রাজনীতি
করে কিংবা যে কোন দলকে ভালোবাসে তারা আহামরি কোন কিছু চায়না কারো কাছে। সামান্য
কিছু্ হলেই তারা সূখি হয়। কিন্তু স্বার্থবাদী ঘুটি কয়েকজন লোকের জন্য দেশের সাধারণ
মানুষ দূর্ভোগের মধ্যে পড়ে আছে। রাজনৈতিক নেতারা
যেন নিজেদের ভাগ্যে উন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে মফস্বলের সাধারণ মানুষের ভাগ্যে
উন্নয়নের জন্য যেন কাজ করেন। তবেই হয়তো
সব আতংক কেটে যাবে। থাকবেনা কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। সব কিছু হবে অবাধ এবং সুষ্ট।
রাজনৈতিক কোন প্রভাব পড়বেনা মফস্বল গুলোতে সহজ সরল মানুষ সব বিবেদ ভূলে গিয়ে সূখে বাচঁতে পারবে।