Saturday 28 December 2013

রাজনৈতিক হালচাল : জনসাধারনের দূর্ভোগ

আব্দুল হাদী :: ২০১৩ সালের শেষের দিকে রাজনীতিতে দেশে অনেক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চড়াই উতরাই চলছে উত্থানের পতন, পতনের পতন, গঠিত দলের অসহায় অবস্থা। ক্ষমতাশীনদের আগ্রাসন, চিরস্থায়ী ক্ষমতায়
ঠিকে থাকার অনন্ত সংগ্রাম। দেশ নিয়ে নিশ্চয় ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়। বিশেষ করে যারা ইতিহাস লিখেন তাদের কাছে নিশ্চয় গণতান্ত্রীক একটি দেশের রাজনীতি হয়ে উঠে মূখ্য বিষয়। বর্তমান সময়টা পেরিয়ে গেলে হয়তো এসময়টুকু ইতিহাস হয়ে থাকবে দেশের মানুষের কাছে। এবারের নির্বাচনে তত্তাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে সংবিধানে, তাইতো প্রধানমন্ত্রী সকল ক্ষমতার মালিক থেকেই নির্বাচন দিচ্ছেন। এ কারনেই বিরোধী দলগুলোর ভয়, নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে নির্ঘাত ফেল। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তত গুলাটে হচ্ছে, কেউ কারো কথা শুনতে চাচ্ছেন না।

২০১৩ সালে ডিসেম্বর মাসটি স্মরনীয় হয়ে থাকার বিশেষত কারণ হলো জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি। রাজনৈতিক কোন দল নিয়ে আলোচনা করা অনেক বিপদ। কারো বিরুদ্ধে কিছু লিখলে কৈফিয়ত দিতে হয়। বিচক্ষণ হয়ে চলার কোন পথ নেই। যে ভাবেই হোক, যে কোন একটি দলের পক্ষে কথা বলতে হবে। স্বতন্ত্র হিসাবে চলতে গেলে জীবনে অনেক বিপদ এসে হাজির হবে। কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে কেউ পাশে আসবে না। তবুও থেমে নেই কারো আলোচনা। দেশের সব মানুষ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। বহুলাংশেই দেখা যায় নির্বাচন আসলে শখের বসে সবাই মিছিল কিংবা মিটিং এর সাথে সম্পৃক্ত হন, তাও নেতা কর্মীদের কথায়। কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে জামায়াতের আলোচনা সম্পূর্ণ তার পক্ষে। তারা বলছে সে নির্দোষ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তিনি শহীদ। তাদের প্রশ্ন দেশে কি শুধু জামায়াত নেতাই রাজাকার যে তাকে ফাঁসি দিলেই দেশ কলংক মুক্ত হয়ে যাবে। আর বাকি যারা আছে তাদের কি করা হবে। আওয়ামীলীগেও তো  যুদ্ধাপরাধী আছে তাদেরকে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধা সম্মাননা দেওয়া হয়? এতে কি বুঝা যায়না দেশের  সবাইকে আওয়ামীলীগের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে না হয় যুদ্ধাপরাধী হতে হবে।

জামায়াতের এসব কথার উত্তর আওয়ামীলীগও কম দেয়নি, তারা বলেছেন জামায়াতের সিনিয়র যারা আছে তারা ১৯৭১ সালে গণহত্যা, গুম, লুন্টন, নারীদের ইজ্জত হরণ সহ নানা রকম অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলো। পরে বিএনপির মদদে শক্তিশালী একটি দলে রূপান্তরীত হয়। তারা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী। তারা দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তরীত করতে চেয়েছিলো। এরাই একাত্তরের মানবতাবীরোধী ও যুদ্ধাপরাধী। এদের সব অপশক্তিকে ধংস না করলে দেশ কলংক মূক্ত হবেনা। এবং তারা যদি বিএনপির কাদে ভর করে পূর্ণ শক্তি সঞ্চয় করে তাহলে  আবার দেশকে পরাধীন করবে। এখনো বিচারের কাঠগড়ায় আছেন জামায়াত নেতা দেলোয়ার হুসেন সাঈদী সহ অনেকে। এতো সবের পরও জামায়াত এখনো পিছু হঠেনি। চুরাগুপ্তা হামলা করে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামীলীগের সাথে রিতিমতো যুদ্ধে লিপ্ত আছে দলটি।

বিএনপি বড় একটি সংগটন, দেশের পরিস্থিতি বিগত নির্বাচনে যেভাবে আওয়ামীলীগের অনুকূলে চলে গিয়েছিলো এবারও বিএনপির অনুকূলে চলে গেছে। কিন্তু তারা সংবিধান না মানাতে নির্বাচনে যেতে পারছেন না। তাছাড়া জামায়াতে ইসলাম এর সঙ্গ ধরেই দলটি মহা বিপদে পড়ে আছে। নির্বাচনে দুটি দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি  স্বৈরশাসক এরশাদ রিতিমতো বেহায়া হয়ে গেছেন জনসাধারনের কাছে। সাধারণ মানুষ একে অপরকে কথায় কথায় বলে, এই তুমি এরশাদের মতো হইওনা। যত সময় যাচ্ছে দলটির দশা খারাপ হতে চলেছে। ঘুরে ফিরে সবাই দুইটি দলের পতাকা তলে আশ্রয় নিচ্ছে। গত নির্বাচনে ছিলো চৌদ্দ দল এবং ঐক্যজোট, এবার হয়েছে আঠারো দল এবং চৌদ্দ দল, যত সময় যাবে আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়ে গেছে। কিন্তু কোন দলই নিজের প্রতীক ছাড়তে রাজি নয়, যদি আঠারো দলকে বলা হয় সবার প্রতীক বাদ দিয়ে ধানের শীষকে সবার প্রতীক মেনে নিয়ে একদল হয়ে যাও, তা কখনো সম্ভব হবেনা। ঠিক এভাবে চৌদ্দ দলও নিজের মার্কা বাদ দিয়ে সবাই নৌকায় উঠতে রাজি নয়।

বুদ্ধির দিক দিয়ে আওয়ামীলীগই এগিয়ে, কারণ চৌদ্দ দলের মধ্যে প্রধান দল জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের বছর দুয়েক পর থেকেই এরশাদ বলে আসছেন আমরাই দেশের প্রদান বিরোধী দল। আমাদের কারণেই আ’লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। ক্ষমতার মসনদে বসার পর তারা আমাদেরকে কোন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেনা। এ দলে আর থাকবো না। কিন্তু বিভিন্ন পন্থায় তাকে আ’লীগ আবদ্ধ করে রেখেছে। তিনি হয়তো চিন্তা করেছিলেন যে আ’লীগ তার উপর পুরোটাই নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। শেখ হাসিনা তেমনটা নয়, কোনঠাসা করে রেখেছেন জাতীয় পার্টি সহ বাকি ১২ টি দলকে।

কিন্তু বিএনপি দূর্বল হয়ে গেছে জামাতের কাছে। যদি এখন জামায়াত তাদেরকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে তাদের অবস্থা হয়ে যাবে করুন। জামায়াত অনেক ভাবে আনেদালন সংগ্রাম করে বুঝতে পেরেছে যে, বিএনপিতে যারা আছেন তাদের চাইতে সব দিকে জামায়াতিরাই এগিয়ে। তাইতো তারা পেরেছে বিএনপির মতো এতো বড় একটি বড় সংগঠনকে পিছনে পেলে একাই আন্দোলন সংগ্রাম করে ঠিকে থাকতে। কবে, কিভাবে এসবের অবসান ঘটবে তা কেউ জানেনা। তবে সাধারণ মানুষ চাচ্ছে সব কিছু মিটমাট হয়ে সুন্দর একটা সমাধান আসুক আর সবাই শান্তিতে থাকুক। আ’লীগ কিভাবে জামাতকে নিঃশেষ করতে পারবে সেটা তারাই বুঝুক, জামায়াত কিভাবে আ’লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাবে এবং বিচারাধীন নেতাদেরকে কিভাবে মুক্ত করে ক্ষমতার মসনদে বসাতে পারে তারাই চিন্তা করুক।

জনসাধারণের ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবে। এদেশে যে কেউ সরকার হোক কারো ভাগ্যের উন্নয়ন করতে পারবেনা এটা সবাই ভালো করেই জানে। যাদের চাপায় জোর আছে, বুদ্ধি আছে, বেহায়াপনা করতে পারে তারাই রাজনীতি করুক তাতে ক্ষতি নেই। তবে সাধারন মানুষের প্রাণ যেন নষ্ট না হয়। আর যেন কোন, মাকে কাঁদতে না হয় তার সমত্মানকে হারিয়ে। অবরোধের সময় যদি কারো মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী কিংবা আত্বীয় স্বজন কেউ অসুস্থ হয় তাহলে ঘরেই মরতে হবে। কেননা রোগীতো আর একা যেতে পারবেনা তার সাথে ভালো লোকও যাবে। একজনের জন্য কয়েকজন কিভাবে মরবে। কি আতংক, কি দূর্বিষহ জীবন, একটা সময় ছিলো মানুষ মাইলের পর মাইল হাঠতো, কিন্তু যানবাহন চলাচল করায় এখন আর কারো পা চলেনা। এখন যানবাহন থাকার পরও মানুষকে হাটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল আর যাদের সাথে পুলিশ আছে, টাকা আছে তারা সাথে সিকিউরিটি নিয়ে গাড়ি চড়তে পারে। আর যদি কোন গরীব গাড়ি চড়তে যায় তাহলে ১০ টাকার ভাড়ার বদলে দিতে হচ্ছে ত্রিশ টাকা। দোকানী মাল নিয়ে বসে আছে কেউ নিচ্ছেনা তার কাছে থেকে মালপত্র। ব্যাংকে টাকার জন্য গেলে কর্মকর্তারা জোড় হাত করে ক্ষমা চাচ্ছেন টাকা নাই বলে। কিভাবে চলবে মানুষ? অনাহারে অর্ধাহারে কাঠছে মানুষের জীবন, কি কারণে কেন এমন হচ্ছে?

সাধারন জনগণ সব কিছু ভালো করে বুঝে, এটা শুধু ক্ষমতার লড়াই। কিন্তু কি করার আছে শক্তির কাছে সবাই দূর্বল। স্বাধীন দেশটিতে সর্বসাধারন যেন পরাধীনভাবে বেচে আছে। পেয়াজ কিনতে গেলে সব টাকা শেষ। অবরোধের কারনে দোকানিরা একা টাকার মাল বিক্রি করছেন দুই টাকায়। এ কারণে তাদেরকে দোষারোপ করে কোন লাভ নেই। গাড়ি নেইতো মাল আসবে কোথা থেকে তাইতো কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। কাদের জন্য প্রতিদিন এতো কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে দেশের। এরা কারা?  সাধারন জনগণ এর চাইতে তো এদের সংখ্যা বেশি নয়, তাহলে জনগণের এতো বিপর্যয় কেন?

সারা দেশের মানুষ কষ্ট সহ্য করতে করতে পুষে উঠছে। মনের দুঃখে বলছে সবাই, যদি আবার ফখরুদ্দিনের মতো কেউ এসে সব ক্ষমতা চিনিয়ে নিতো তাহলে এতোটা দূর্ভোগ পোহাতে হতো না। মানুষ খোদা ভিরু নয় সবাই মুগুরকেই ভয় পায়। তাইতো ভালো একটা শক্তি এলে সব লেজ গুটিয়ে ঘরে চলে যেতো। এতো কষ্ট সহ্য করতে না পেরে হয়তো কখনো সাধারণ জনগণ ঘটিয়ে দিতে পারে কোন বিপ্লব স্বাধীন এ বাংলাতে। তবেই হয়তো  ক্ষ্যান্ত সব স্বার্থপরেরা।